চা শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে ১৮ দিন ধরে চা-পাতার কুঁড়ি তোলা বন্ধ। ফলে চা-পাতা বড় হয়ে গেছে, যা কাজে লাগবে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আজ শনিবার চা-বাগান মালিকদের বৈঠক হওয়ার কথা। এই বৈঠকের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় মৌলভীবাজারের ৯২টিসহ দেশের ১৬৭টি চা-বাগানের আন্দোলনরত শ্রমিকরা। শ্রমিকদের প্রত্যাশা, প্রধানমন্ত্রী তাঁদের কষ্টের কথা বিবেচনা করে মজুরি বৃদ্ধি করবেন।
৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে ৯ আগস্ট থেকে দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি এবং পরে ১৩ আগস্ট অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করছেন চা শ্রমিকরা।
প্রশাসন থেকে শুরু করে চা শ্রমিক সংগঠনের নেতারা শ্রমিকদের কাজে যোগদান করতে নানা কৌশল ও বৈঠক করলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা ছাড়া কাজে যোগদান করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নীপেন পাল বলেন, ‘বহিরাগতরা উসকানি আর ব্রেইনওয়াশ করে আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে। আমাদের শেষ ঠিকানা প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর যেকোনো সিদ্ধান্ত আমরা মাথা পেতে নেব। কিন্তু একটি মহল শ্রমিকদের ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছে। ’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ (২৭ আগস্ট) চা-বাগানের মালিকদের সঙ্গে সভা করবেন—বৃহস্পতিবার বিকেলে গণভবনে এমন সংবাদ গণমাধ্যমকে জানান প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেসসচিব এম এম ইমরুল কায়েস। এদিকে ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে চা শ্রমিকদের ধর্মঘটের ১৭তম দিনে গতকাল শুক্রবার চা-বাগানগুলোতে কাজ বন্ধ থাকলেও শ্রমিকদের সভা-সমাবেশ বা বিক্ষোভের মতো কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি। তবে তিন-চারটি বাগানে মিছিল করেছেন শ্রমিকরা। বাগান মালিকদের সঙ্গে আজ শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে বসার ঘোষণার পর থেকে এক ধরনের নীরব ধর্মঘট পালন করছেন শ্রমিকরা। তবে বিগত সময়ে চা শ্রমিক নেতারা মাঠে থাকলেও গত পাঁচ দিন ধরে তাঁরা মাঠে নেই। তাঁদের জায়গায় সাধারণ শ্রমিক নেতা ও যুবনেতারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
এবার ভরা মৌসুমে মজুরি বৃদ্ধির টানা ১৭ দিনের শ্রমিক আন্দোলনের ফলে শত শত কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে চা-শিল্পে। টানা শ্রমিক আন্দোলনের প্রথম দিকে সব চা-বাগানে উত্তোলন করা কাঁচা চায়ের পাতা প্রক্রিয়াজাত করতে না পারায় পচে ও শুকিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া চা প্ল্যান্টেশন এলাকা থেকে কচি চা-পাতা তুলতে না পারায় সেগুলোও এক থেকে দেড় ফুট লম্বা হয়ে গেছে। এ পাতা চায়ের জন্য প্রক্রিয়াজাত করা সম্ভব নয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন চা-বাগান ব্যবস্থাপক বলেন, দ্রুত সমস্যার সমাধান করে চা শ্রমিকরা কাজে না ফিরলে চা-শিল্প ধ্বংসের মুখে চলে যেতে পারে।
বাংলাদেশ চা ছাত্র যুব পরিষদের নেতা মোহন রবিদাস বলেন, ‘আন্দোলনরত চা শ্রমিকরা মজুরির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ঘোষণা শুনতে চান। বাগান মালিকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে বসবেন, তাই প্রধানমন্ত্রীর সম্মানার্থে সভা-সমাবেশ ছাড়াই শুক্রবার ও শনিবার ধর্মঘট পালন করবেন শ্রমিকরা। ’
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নির্বাহী উপদেষ্টা রামভজন কৈরী বলেন, ‘আমরা সবাই প্রধানমন্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই সব কিছু বিবেচনা করে একটি মানসম্মত মজুরি নির্ধারণ করবেন। আমার বিশ্বাস, প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সাধারণ চা শ্রমিকরা সেটাই মেনে নেবেন। ’