আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনা ও টিকিয়ে রাখার জন্য কেউ ভারতকে অনুরোধ করেনি। শেখ হাসিনা কাউকে এমন দায়িত্বও দেননি। এ বিষয়ে কেউ কথা বললে সেটি তাঁর ব্যক্তিগত অভিমত। ’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের গত বৃহস্পতিবারের এক মন্তব্য প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন অবশ্য তাঁর সেই মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়ে গতকাল বলেছেন, তিনি মূলত বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় ভারতের সহযোগিতা চেয়েছেন।
এদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভারতের ‘আনুকূল্যে’ সরকার টিকে আছে কি না, প্রশ্ন রেখে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দাবি করেছেন।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে উল্লেখ করেন, ‘আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। ’ এমন বক্তব্যের পর সমালোচনার মুখে পড়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
গতকাল সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রাজধানীর পলাশী মোড়ে কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমী শোভাযাত্রা উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ কোনো বৈরী সম্পর্ক চায় না। ভারত আমাদের দুঃসময়ের বন্ধু। কিন্তু দীর্ঘ ২১ বছর বৈরিতা করে আমাদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। ’
মন্ত্রী আরো বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া দেশে কোনো সাম্প্রদায়িক হামলা হয়নি। যারা হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করেছে তারা দুর্বৃত্ত। ’
‘ভারতকে স্থিতিশীলতা রক্ষায় সহযোগিতা করতে বলেছি’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন গতকাল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, তিনি মূলত বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় ভারতের সহযোগিতা চেয়েছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘দুষ্ট লোক’ দুই দেশেই আছে এবং উসকানি দিয়ে ও তিলকে তাল করে তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায়। তারা সুযোগ না পেলে বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশই শান্তি ও স্থিতিশীল থাকবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আসামের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন যে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার ‘জিরো টলারেন্স’ (ছাড় না দেওয়া) নীতির কারণে আসাম রাজ্য স্থিতিশীল হয়েছে। সেখানে এখন বিনিয়োগ হচ্ছে। আসামের মুখ্যমন্ত্রীর ওই বক্তব্য তিনি নয়াদিল্লির কাছে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি বলেছি, শেখ হাসিনা যদি সরকারে থাকেন তাহলে স্থিতিশীলতা থাকে। স্থিতিশীলতা থাকলেই আমাদের উন্নয়নের মশাল অব্যাহত থাকবে। ’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাঁর গত বৃহস্পতিবারের বক্তব্য গণমাধ্যম ভিন্নভাবে উপস্থাপন করেছে। তিনি বলেন, দেশে সবার বাকস্বাধীনতা রয়েছে। তাই সবাই সব কথা বলতে পারেন। তবে বক্তব্য অন্যভাবে উপস্থাপন হলে দুঃখ লাগে। তিনি গণমাধ্যমকে একটু সহনশীল হওয়ার অনুরোধ জানান। এর আগের সপ্তাহে সিলেটে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের জনগণ ‘বেহেশতে’ আছে। সেই খবরটিও গণমাধ্যম আংশিক বা অন্যভাবে উপস্থাপন করেছিল বলে মন্তব্য করেছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ব্যাখ্যা চাইলেন ফখরুল
ভারতের ‘আনুকূল্যে’ সরকার টিকে আছে কি না, প্রশ্ন রেখে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের ব্যাখ্যা দাবি করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনাসভায় ফখরুল বলেন, ‘গত পরশু দিন ঢাকায় আওয়ামী লীগের মিছিল-সমাবেশ হয়েছে। সেখানে মন্ত্রীরা হুমকি দিয়েছেন, হুংকার দিয়েছেন, সন্ত্রাসী ভাষায় কথাবার্তা বলেছেন। এতই যদি আপনারা হুমকি দেন, ধমকি দেন, তাহলে আবার আপনাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আপনাদের সরকারকে টিকিয়ে রাখার জন্য, প্রধানমন্ত্রীকে টিকিয়ে রাখার জন্য ভারতের সাহায্য দাবি করেন কেন?’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা এই কথাটার (পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য) ব্যাখ্যা চাই। আমরা জানতে চাই, এই সরকারের কাছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে এবং ভারত সরকারের কাছেও। ’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই সরকারকে আর কোনো সময় দেওয়া যাবে না, আমরা আওয়ামী লীগকে আর কোনো সময় দিতে রাজি নই, এই সরকারকে আর কোনো সময় দেওয়া হবে না। এখন জনগণের ঐক্য গড়ে তুলে একই সঙ্গে রাজপথ দখল করে নিয়ে এদের পরাজিত করতে হবে। আমরা সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি। ’