মঙ্গলবার , ১৬ এপ্রিল ২০২৪ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
insidebusinessnews.com
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ
  3. অর্থনীতি
  4. আইন-আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. খেলাধুলা
  7. গল্প
  8. জাতীয়
  9. ধর্ম
  10. প্রবাস
  11. ফিচার
  12. বাণিজ্য
  13. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  14. বিনোদন
  15. বিভাগীয় সংবাদ

ইরান-ইসরাইল পরিস্থিতি কোন পথে?

প্রতিবেদক
Newsdesk
এপ্রিল ১৬, ২০২৪ ১১:২৩ অপরাহ্ণ

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি দূতাবাস প্রাঙ্গণে হামলার পাল্টা হিসাবে শনিবার রাতে ইসরাইলকে লক্ষ্য করে প্রতিশোধমূলক হামলা চালিয়েছে তেহরান। ইসরাইলের ভূখন্ড লক্ষ্য করে কমপক্ষে ৩০০টি ড্রোন ও মিসাইল হামলা চালিয়েছে ইরান। এরিমধ্যে পাল্টা হামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরাইল।

দুই দেশের মধ্যে বহুদিনের বৈরিতা থাকলেও এবারই প্রথম সরাসরি ইসরাইলে হামলা চালাল দেশটি। গেল কয়েক দশক ধরে ছায়াযুদ্ধে লেগে থাকলেও কোনো পক্ষই অন্য পক্ষের ভূখণ্ডে সরাসরি আক্রমণ চালায়নি। তবে ইরানি স্বার্থে বারবার আঘাত করে গেছে তেল আবিব। যার মধ্যে অনেক হত্যাকাণ্ড রয়েছে।

ইরান কয়েক দশক ধরে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া এড়ানোর জন্য যে প্রক্সি বা ছায়া-যুদ্ধ চালিয়ে আসছিল, তার অবসান ঘটালো ইসরাইলের উপরে সরাসরি আক্রমণের মাধ্যমে। বলা হচ্ছে, অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক চাপ বৃদ্ধির মধ্যেই দেশের ধর্মতান্ত্রিক নেতৃত্ব নতুন পথ বেছে নিয়েছে।

2

বেশ কয়েক দিন ধরে হুঁশিয়ারি দেয়ার পর ইরান, ইসরাইলের হিসেব অনুযায়ী, ইসরাইলকে লক্ষ্য করে ১৭০টি বোমা বহনকারী ড্রোন, ৩০টিরও বেশি ক্রুজ মিসাইল এবং ১২০টিরও বেশি ব্যালিস্টিক মিসাইল নিক্ষেপ করে। ঐসব অস্ত্রের মধ্যে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাশিয়াকে সরবরাহ করা বোমা বহনকারী ড্রোনও রয়েছে।

ইরানের আক্রমণের জবাবে ইসরাইল পরবর্তীতে কি ধরনের সামরিক পদক্ষেপ নিতে পারে, সেদিকেই এখন সবার দৃষ্টি। যদিও পাল্টা হামলার পরিবর্তে কূটনৈতিক সমাধানের ওপর জোর দিচ্ছে ওয়াশিংটন। সেই কথা আমলে নেয়ার পরও, ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা ইরানকে জবাব দেয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তবে কিভাবে জবাব দেয়া হবে সেটা নিয়ে কোন কোন ধারণা দেয়া হয়নি। বলা হয়েছে, জবাব দেয়ার নির্দিষ্ট পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং নিজেদের উপযুক্ত সময়ে এই জবাব দেয়া হবে। ইরানও বলেছে, যদি পাল্টা হামলা হয় তাহলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে।

3

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা বিবিসির নিরাপত্তা সংবাদদাতা ফ্র্যাঙ্ক গার্ডনারের মতে, ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে চলমান সংঘাতের পরিণতি কী হতে পারে তা এখন অনেকটাই নির্ভর করছে ইসরাইল ঠিক কীভাবে শনিবার রাতে চালানো হামলার জবাব দেয়, তার ওপর। তবে মধ্যপ্রাচ্যে ও বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই জবাব দেয়ার বিপক্ষে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্টিটিউট অফ পিসের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা কেন্দ্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মোনা ইয়াকুবিয়ান মনে করেন, দামেস্কে হামলার জন্য প্রকাশ্যে প্রতিশোধ নেয়া এবং আরো বিস্তৃত সংঘাত এড়ানোর মাধ্যমে ভারসাম্য বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে ইরান। বিষয়টি এখানে কেন্দ্রীভূত থাকলে সবারই মঙ্গল।

তিনি আরো বলেন, যেহেতু হামলায় কোনো ইসরাইলি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়নি এবং বেশিরভাগ আক্রমণই প্রতিহত করতে পেরেছে সে কারণে বিজয় দাবি করতেই পারে তেল আবিব। একইসঙ্গে দামেস্কে হামলার জবাবে প্রথমবার সরাসরি ইসরায়েলে হামলা করাও ইরানও বিজয় দাবি করতে পারে।

বিবিসি পার্সিয়ান বিভাগ বলছে, শনিবার রাতের হামলার পর ইরানের কর্তৃপক্ষ তো বটেই, দেশটির সাধারণ মানুষও বেশ খুশি। তেহরানের রাস্তায় নেমে তারা উল্লাসও করেছে। ইসরাইল যদি নতুন করে আর হামলা না চালায়, তাহলে ব্যাপারটা এখানেই মিটে যাওয়া ভালো- এমন একটা মানসিকতাও তেহরানে কাজ করছে।

4

কিন্তু ইসরাইলের ভেতরে অশান্তি। ইরানকে জবাব দিতে চায় কট্টরপন্থী সরকার। হামাসের হামলার জবাব দিতে মাত্র কয়েক ঘন্টা সময় নেয়া ইসরাইল একইভাবে হামলা করতে চাইলেও পশ্চিমাদের চাপে আপাতত বিরতি নিচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও এরিমধ্যে ইরানে হামলার অনুমতি পেয়েছে তেল আবিব।

সুইডিশ ডিফেন্স ইউনিভার্সিটির কৌশলগত উপদেষ্টা ম্যাগনাস র‌্যানস্টর্প বলেন, ইরানের আক্রমণ ছিলো একটি সতর্কতামূলক আক্রমণ। ইরান মূলত বলতে চেয়েছে যে, ইসরাইল যদি নিয়ম ভঙ্গ করে, তাহলে পরিণতি খারাপ হতে পারে। ইরান বলেছে, তারা পুরো অঞ্চল জুড়ে সর্বাত্মক যুদ্ধ চায় না।

তবে ইসরাইলি কট্টরপন্থীরা পাল্টা হামলার জন্য নেতানিয়াহু সরকারকে চাপ দিচ্ছে। ওয়ার ক্যাবিনেটের সদস্য বেনি গ্যান্টজ বলেন, আমরা একটি আঞ্চলিক জোট গড়ে তুলব। হামলার প্রেক্ষিতে ইরানকে যাতে মূল্য দিতে হয় তা নিশ্চিত করব। যদিও ইসরাইলের পাল্টা পদক্ষেপ নিক- এমনটা চায় না যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা।

ইসরাইলে ইরানের হামলা নিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ বৈঠক হয়। বৈঠকে ইরান স্পষ্ট বলেছে, তারা এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে লড়াই শুরু করতে চায় না। কিন্তু আমেরিকা যদি ইরান এবং তার জনগণের ওপর সামরিক হামলা শুরু করে, তাহলে তেহরান ন্যায্যভাবে আত্মরক্ষা করবে।

5

এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, কোন পথে হাঁটবে ইসরাইল। জায়নবাদী দেশটির সামনে এক বেশ কিছু উপায় আছে। প্রথমত, ইরানে সরাসরি আক্রমণ না করে ইরানের স্বার্থ সংশ্লিষ্টকে আঘাত করে যাওয়া, যা দেশটি বহু বছর ধরেই করে আসছে। দ্বিতীয়ত, ইরানের মতো দূর থেকে মিসাইল ছুঁড়ে পাল্টা জবাব দেয়া।

তৃতীয় পথ হলো, ইরান যেভাবে হামলা চালিয়েছে তার চেয়ে অনেক শক্তিশালী পাল্টা হামলা চালালো। সে ক্ষেত্রে তারা শুধু নির্দিষ্ট মিসাইল ঘাঁটিগুলোই নয়, ইরানের অত্যন্ত শক্তিশালী বিপ্লবী গার্ডের ঘাঁটিকে নিশানা করবে। ইসরাইল যদি এই শেষ দুটো পথে এগোয়, তাহলে ইরান পাল্টা আঘাত হানবেই।

এমন পরিস্থিতি হলে মার্কিন অক্ষ বেশিদিন চুপ থাকবে না। আর ইরানের বন্ধুরাও তখন বসে থাকবে না। যদি ইরান বড় আকারে আক্রমণের শিকার হয়, তাহলে বন্ধ কর দেবে হরমুজ প্রণালী। সেটি হলে বিশ্ব বাণিজ্যে রীতিমতো দুঃস্বপ্নের মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে। যা সামাল দিতে পারবে না গোটা দুনিয়া।

তাই এই পরিস্থিতি এড়াতে মরিয়া পশ্চিমারা। তবে শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, সেটি এখনো বলা যাচ্ছে না। কারণ, ইরান ও ইসরাইলের ভেতরের সমীকরণ শুধু পশ্চিমা ফ্যাক্টরই নয়, আরও অনকে পক্ষের উপর নির্ভর করে। তাই আপাতত পরিস্থিতির ওপর সতর্ক নজর রাখতে হবে সারাবিশ্বকে।

সর্বশেষ - অন্যান্য