বৃহস্পতিবার , ১০ আগস্ট ২০২৩ | ১৪ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
insidebusinessnews.com
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ
  3. অর্থনীতি
  4. আইন-আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. খেলাধুলা
  7. গল্প
  8. জাতীয়
  9. ধর্ম
  10. প্রবাস
  11. ফিচার
  12. বাণিজ্য
  13. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
  14. বিনোদন
  15. বিভাগীয় সংবাদ

এস আলমের সম্পদ বাজেয়াপ্তের জন্য সিঙ্গাপুর, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস এবং সাইপ্রাসে যুক্তরাস্ট্রের চিঠি

প্রতিবেদক
Newsdesk
আগস্ট ১০, ২০২৩ ১২:১০ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযানের জবাবে দেশটির ধনকুবের ব্যবসায়ী যাদেরকে প্রেসিডেন্ট পুতিনের ঘনিষ্ঠ সহচর ভাবা হয় তাদের ওপর যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন সরকার কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। মি. পুতিন তার সহচরদের আগে থেকেই এ ধরণের নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে সতর্ক করে আসছিলেন, বিশেষ করে ক্রাইমিয়া দখল করে নেবার পর যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর সাথে তার সম্পর্কে অবনতি ঘটার পর। পুতিনের বন্ধুদের মধ্যে আলীশের উসমানভ, রোমান আব্রামোভিচ, ওলেগ ডেরিপাসকা, ইগর সেচিন, আলেক্সি মিলারের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

গত ২৩ জুলাইও বিভিন্ন দেশের ওপর নানা কারণে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এরই ধারাবাহিকতায় দুটি দেশের ১২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় দেশটি। দেশ দুটি হলো- রাশিয়া ও কিরগিজস্তান। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার লাগাম টেনে ধরতে দেশটির সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহকারী ও অর্থের জোগানদাতা দুই দেশের ১২০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। নিষেধাজ্ঞার আওতায় রাশিয়ার ব্যাংক, এনার্জি ইন্ডাস্ট্রি, জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান, প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং রাশিয়ার প্রাইভেট মিলিটারি কোম্পানি রয়েছে।

এবছরেরই ২৫ মার্চ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নতুন করে আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়।দেশটির জান্তা সরকারের ওপর চাপ আরও বাড়াতে এ পদক্ষেপ নেয় যুক্তরাষ্ট্র। ২০২১ সালে সেনাবাহিনী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলে, তারা মিয়ানমারের সরকার, সেনাবাহিনী এবং তাদের আর্থীকভাবে সহযোগীতা করে এমন সংশ্লিষ্ট দুই ব্যক্তি ও ছয়টি প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

আর মার্কিন যুক্তরাস্ট্র বাংলাদেশের বিষয়ে সেই পথেই হাটছেন বলে জানায় মার্কিন কংগ্রেস নেতারা। গনমাধ্যমকে তারা বলছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও পুতিনের মত বেশকিছু অলিগার্ক তৈরী করেছে রেখেছে তার সংকটের সময় যেনো এই অলিগার্করা তাকে আর্থীকভাবে সহায়তা করতে পারে। বিশেষ করে বিরোধী দলের দমন নিপীড়নের সময় অবৈধ এই অর্থ সরকারী দলের প্রয়োজন হয়। কারন প্রশাসনের কর্মকর্তারা অতিরিক্ত অবৈধ অর্থ না পেয়ের সরকারী দলের হয়ে কাজ নাও করতে পারে সেই আশংকাতেই এই জাতীয় অলিগার্কদের প্রয়োজন হয় প্রত্যেক স্বৈরশাসকের।

আর সেই কারনের বাংলাদেশে ব্যবসায়ী সাইফুল আলম মাসু নামের এক ব্যবসায়ী যার প্রতিষ্ঠানকে এস আলম গ্রূপ নামে সবাই চেনে। আর এস আলম গ্রূপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলম সিঙ্গাপুরে অবৈধভাবে কমপক্ষে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। এস আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনের সিঙ্গাপুর, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস এবং সাইপ্রাসে বিনিয়োগের সন্ধান পাওয়া গেছে।

গনমাধ্যমের তথ্যে বলাহয় ভূমধ্য সাগরীয় ছোট দেশ সাইপ্রাস ২০০৭ সালে তাদের ‘গোল্ডেন পাসপোর্ট’ কর্মসূচি চালু করে। বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক পরামর্শদাতা সংস্থার মতে, এই প্রকল্পের আওতায়, দেশটির আবাসনখাতে প্রায় ২ মিলিয়ন ইউরো (২ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) বিনিয়োগ এবং সাইপ্রাস সরকারের গবেষণা ও ভূমি উন্নয়ন তহবিলে আরও ২ লাখ ইউরো অনুদানের বিনিময়ে ধনী বিদেশিদের সাইপ্রাসের নাগরিকত্বের সুযোগ দেওয়া হয়।

এই ব্যবসায়ীর সিঙ্গাপুরের এই বিপুল ব্যবসায়িক সম্রাজ্য এমন এক ঠিকানার আড়ালে চলে, যার অস্তিত্ব কেবল কাগজে-কলমে আছে। সিঙ্গাপুরের সরকারি উন্মুক্ত ডেটা পোর্টালের ২০২৩ সালের জুনের তথ্য অনুসারে, ওই ভবন থেকে ৫০০ শেল কোম্পানি (নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান) তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। যদিও তাদের মধ্যে বেশ কয়েকটির এখন আর অস্তিত্ব নেই।

এস আলম ও তার স্ত্রী ২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর উইলকিনসনের পরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসের পিকক প্রপার্টি হোল্ডিংস লিমিটেড নামে একটি অফশোর কোম্পানিতে তাদের মালিকানা হস্তান্তর করেন। ২০১৭ সালে প্যারাডাইস পেপারস ফাঁস হলে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি ও কোম্পানির অফশোর কার্যক্রম উন্মোচন হয়। এরমধ্য দিয়ে কর স্বর্গ হিসেবে শিরোনামে উঠে আসে ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডসের নাম।

চালু হওয়ার পাঁচ বছর পর ২০১৪ সালের ২৬ আগস্ট এস আলমের ক্যানালি লজিস্টিকস সিঙ্গাপুরের ‘লিটল ইন্ডিয়া’য় ১৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে ৩২৮ কক্ষের গ্র্যান্ড চ্যান্সেলর প্রাইভেট লিমিটেড হোটেলটি কেনার জন্য চুক্তি সই করে। হোটেল মালিকদের পক্ষ থেকে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের এবং সিঙ্গাপুর সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জের কাছে পাঠানো এক সার্কুলারে এ তথ্য জানানো হয়। চুক্তিপত্র অনুযায়ী, ‘চুক্তিমূল্য কয়েকটি কিস্তিতে নগদে পরিশোধ করা হবে।’ সার্কুলারে আরও বলা হয়েছে, চুক্তির শর্ত পূরণ করে ক্যানালি ইতোমধ্যেই ‘প্রাথমিক আমানত ও ব্যালেন্স ডিপোজিটসহ ১৮ দশমিক ৬ মিলিয়ন সিঙ্গাপুর ডলার (প্রায় ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) পরিশোধ করেছে।’

সিঙ্গাপুরের গণমাধ্যম দ্য বিজনেস টাইমস অনুসারে, ২০১৬ সালে সিঙ্গাপুরের ১৯তলা সেন্ট্রিয়াম স্কয়ারে ২৭ হাজার বর্গফুটের একটি বাণিজ্যিক স্পেস ১০০ দশমিক ৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে কিনে নেয় ক্যানালি। অধিগ্রহণের এক বছর পর ক্যানালি লজিস্টিকস তার নাম পরিবর্তন করে উইলকিনসন ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড করে, ২০২১ সালে যার সম্পদের মোট মূল্য ছিল প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (১০ হাজার কোটি টাকা)। এই প্রতিবেদন লেখার সময় সিঙ্গাপুর কর্তৃপক্ষের কাছে ২০২২ সালের কোনো কাগজপত্র ছিল না।

প্রতিষ্ঠানটি যখন একের পর এক সম্পত্তি ক্রয় করেছে, এর তিন বছরের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের বিবরণীর তথ্য থেকে জানা যায়, কোম্পানির আয়ের চেয়ে ব্যয় ছিল বেশি। উইলকিনসনের আর্থিক বিবরণীতে দেখা গেছে, ২০১৯ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে তার বার্ষিক আয় কখনই ৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেনি। ২০২০ সালে এটি ৩৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০১৯ সালে ৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল।

আর এস আলমের নামের প্রায় সব টাকাই সরকার প্রধান বা তার আত্বীয় স্বজনের বলে দাবী করে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বিরোধ রাজনৈতিক দরের নেতারা। তারা মনে করেন সরকার দলীয় শীষৃ নেতৃবৃন্দ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীদের দমন করা, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের টাকার বিনিমযে আসছে নির্বাচনে তাদের ইচ্ছে মত করে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে এইসব পাচার করা টাকা কাজে লাগাতে পারে বলে মনে করে যুক্ত রাস্ট্র। তাই যুক্তরাস্ট্র মনে করে বাংলাদেশে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠছার ক্ষেত্রে এস আলমের পাচার করা এসব টাকা বাধা হয়ে দাড়াতে পারে। আর সেই কারনে এস আলমসহ তার পরিবার, প্রতিষ্ঠানকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় এনে সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার প্রয়োজন হতে পারে।

আর সেই ইঙ্গিতই ছিলো মঙ্গলবার যুক্তরাস্ট্রের হোয়াইট হাউজের মুখ্রপাত্র মিলারের কণ্ঠে। মি মিলার সাংবাদিকদের জানান নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার আগে বিষয়টি নিয়ে আমরা কখনোই কথা বলি না। তবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটি হাতিয়ার হতে পারে নিষেধাজ্ঞা। আর যক্তরাস্ট্রের এমন আরো ও কিছু হাতিয়ার রয়েছে। যেমন সম্পদ জব্দ করা। অংশীদার দেশগুলোকে তথ্য দেওয়া, যাতে তারা মামলা করতে পারে।’ আর মিলারের এই বক্তব্যে ষ্পষ্ট হয় যে এস আলমের সম্পদ বাজেয়াপ্তের জন্য সাইপ্রাস সরকার, ব্রিটিশ ভার্জিনিয়া আইল্যান্ডের সরকারসহ সিঙ্গাপুরের সরকারকেও এস আলমের তথ্য সরবারহ করে সহায়তা করতে পারে।

সর্বশেষ - অন্যান্য