ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে দেশের সাত জেলায় ১৬ জনের মৃত্যুসহ বিধ্বস্ত হয়েছে উপকূল ও এর আশপাশে ১৯ জেলার প্রায় পৌনে দুই লাখ ঘরবাড়ি। ঝড়ে ঘর হারানো এই মানুষগুলোর জন্য আশার বাণী শোনালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের চিন্তার কিছু নেই। সরকার পাশে আছে, যাদের ঘর পুরোপুরি নষ্ট হয়েছে, তাদের ঘর করে দেওয়া হবে। এছাড়া যাদের ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদেরও উপকরণ দিয়ে সহযোগিতা করা হবে।
মঙ্গলবার বেলা ১১টায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সুবিধাভোগীদের জমির মালিকানা দলিলসহ বাড়ি হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
এসময় লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা, কক্সবাজারের ঈদগাঁও এবং ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে সুবিধাভোগীদের কাছে জমির মালিকানা দলিলসহ বাড়ি হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী।
একই সঙ্গে এদিন সারাদেশে গৃহ ও ভূমিহীন পরিবারকে আরও ১৮ হাজার ৫৬৬টি বাড়ি হস্তান্তর করা হয়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যাশনাল ডিজাস্টার রেসপন্স কো–অর্ডিনেশন সেন্টারের তথ্য বলছে, সবচেয়ে বেশি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে খুলনা জেলায়। এই জেলায় ২০ হাজার ৭৬২টি ঘরবাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। বাগেরহাটে বিধ্বস্ত হয়েছে ১০ হাজার ঘরবাড়ি। বাকিগুলো বিধ্বস্ত হয়েছে বিভিন্ন জেলায়। এই ঘূর্ণিঝড়ে দুর্গত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৪৬ লাখ বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
এছাড়া ১৯ জেলার প্রায় পৌনে দুই লাখ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এর মধ্যে পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে ৪০ হাজার ৩৩৮টি এবং আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে এক লাখ ৩৩ হাজার ৫২৮টি ঘরবাড়ি।
ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতির মুখে পড়ে উপকূল ও আশপাশের ১৯ জেলা। এগুলো হলো- সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, ফেনী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও যশোর। এর মধ্যে মৃত্যুর ঘটনাগুলো ঘটেছে খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, চট্টগ্রাম ও পিরোজপুরে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের ঘরবাড়ি সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে তাদেরকে আমরা ঘর তৈরি করে দেবো। আর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ঘরগুলো নির্মাণের উপকরণ দিয়ে সহায়তা করবো।
যাদের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের চিন্তার কোনো কারণ নেই জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রত্যেকে যেন ঘর নির্মাণ করতে পারেন সেই ব্যবস্থা আমি করে দেব। এরইমধ্যে সেভাবে আমার প্রস্তুতি নিয়েছি। প্রত্যেক এলাকা থেকে আমরা তথ্য সংগ্রহ করেছি। সে অনুযায়ী আমরা সহায়তা পাঠাবো।
ইতিমধ্যে যাদের ঘরে করে দেওয়া হয়েছে তাদের জীবন বদলে গেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনার ঘর নিজেকেই যত্ন নিতে হবে। বিদ্যুৎ, পানির ব্যবহারে সচেতন হতে হবে। প্রকৃতিক দুর্যোগ সঙ্গে নিয়েই আমাদের চলতে হবে।
এসময় নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদেরও ঘরে করে দেওয়া হবে বলেও জানান সরকারপ্রধান।
নানা উদ্যোগে মানুষের জীবনমানের উন্নতি হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করার কারণে তারা শুভ ফল পেতে শুরু করেছে। বিশ্বে যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট সঙ্কটের মধ্যেও মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে সরকার কাজ করছে, নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। কোথাও দেশের মানুষ পিছিয়ে থাকবে না, সেটাই সরকারের লক্ষ্য।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের মাধ্যমে উপকারভোগীদের ভাগ্য বদলেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা যেমন জনগণের সেবক হিসেবে নিজেকে দাঁড় করিয়েছিলেন, আমিও তেমনি নিজেকে জনগণের সেবক হিসেবে উপস্থাপন করি। বাংলাদেশকে এগিয়ে যেতেই হবে।
এসময় দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোথাও এক ইঞ্চি জমি যেন অনাবাদি না থাকে। যে যতোটুকু পারেন উৎপাদন করুন। নিজের খাদ্য নিজেরা উৎপাদন করবো। কারো কাছে মাথা নিচু করে থাকবো না। যতোটুকু সম্পদ, ততোটুকু সঠিকভাবে কাজে লাগালে দেশের মানুষ পিছিয়ে থাকবে না।
তিনি বলেন, জাতির পিতাকে হত্যা করার পর অবৈধভাবে ক্ষমতার দখলকারীরা এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে ব্যস্ত ছিল। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে জনগণের সেবক হিসেবে যাত্রা শুরু করে। তখন থেকেই ভূমিহীন মানুষদের জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছিলাম। তখন বাংলাদেশের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। তারপরও ভূমিহীন মানুষদের মধ্যে ঘর তৈরি করার জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প নামে একটি প্রকল্প নিয়ে আমরা ঘর বানাতে শুরু করি।