নিজস্ব প্রতিবেদক: ইউনিয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ বি এম মোকাম্মেল হক চৌধুরী দেশ থেকে পালানোর চেষ্টা করছেন বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানাযায়। এই মোকাম্মেল স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ব্যবসায়ীক পাটনার এবং দেশের আর্থিক খাতের লুটেরা এস আলমের টাকা পাচারের অন্যতম সহযোগী। ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা জানা মোকাম্মেলকে গ্রেফতার করতে পারলে এস আলম এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর টাকা পাচারের সকল তথ্য পাওয়া যাবে।
ইউনিয়ন ব্যাংকের এমডি হলেও দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট এবং পাচারের অন্যতম হোতা এই মোকাম্মেল চৌধুরী। মোকাম্মেল এস আলমের যত প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক রয়েছে সব ব্যাংক এবং প্রতিস্ঠানের আর্থিক নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করো। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যবসায়ীক পার্টনার হিসেবে ক্ষমতার অব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যাক্তি প্রতিষ্ঠানকে হয়রানি করে বিপুল অর্থের মালিক হন।
একটি গ্রুপের এত বেশি ঋণ নেওয়া এবং একাধিক ব্যাংক একটি গ্রুপের পরিচালনায় থাকা দেশের ব্যাংকিংখাত ও অর্থনৈতিকখাতের জন্য উদ্বেগজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারি শুরু হওয়ার আগে তৎকালীন গভর্নরসহ আরও ১৫ থেকে ২০ জন সদস্য নিয়ে একটি মনিটরি পলিসি মিটিং হচ্ছিল। সেখানে বলেছিলাম, এস আলম গ্রুপ নামে-বেনামে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, সেইসঙ্গে তারা এতগুলো ব্যাংকের মালিকানায় আছে। এটা তো ব্যাংকিং খাতের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ। গভর্নর শুনে নীরব থেকেছেন। এ বিষয়ে কোনো কথা বলেননি।’
সেই সময় তৎকালীন গভর্নরকে মজা করে বলেছিলাম, এস আলম গ্রুপের মালিকের সঙ্গে একটি অ্যাম্বুলেন্স সার্বক্ষণিক রাখার ব্যবস্থা করেন। যাতে তিনি কোনো কারণে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেও দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া যায়, তাকে বাঁচিয়ে রাখা যায়। নইলে তিনি মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের ব্যাংকিংখাত ধসে যাবে। একজন মানুষের কার্যক্রমে পুরো দেশের ব্যাংকিংখাত ধ্বংসের মুখে পড়তে পারে,’ যোগ করেন তিনি।
কয়েকটি ব্যাংক থেকে এস আলম গ্রুপের নেওয়া ঋণের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এস আলম গ্রুপের ৩০ হাজার কোটি টাকা, ৮০ হাজার কোটি টাকা বা ১ লাখ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার বিষয়টি সাধারণ মানুষ এখন জানতে পারছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক, এমনকি অর্থ মন্ত্রণালয়েরও বিষয়টি আগে থেকেই জানা ছিল। কিন্তু সবাই চুপ থেকেছে। কেউ তার দায়িত্ব পালন করেনি।’অথচ এস আলমকে এসব টাকা পাচারের যারা সহযোগীতা করেছে সেইসব ব্যাংক কর্মকর্তা যেমন ইউনিয়ন ব্যাংকের এমডি মোকাম্মেল, কমার্স ব্যাংকের ডিএমডি আব্দুল কাদের, সরাসরি জড়িত ছিলো অর্থ পাচারের সাথে। অথচ এর প্রত্যেকেই বহাল তবিয়তে রয়েছে যার যার জায়গায়।
ব্র্যাক ব্যাংকের ইনডিপেনডেন্ট ডিরেক্টর ও চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘২০১৯ বা এর কাছাকাছি সময়ে সিঙ্গাপুরভিত্তিক কিছু সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে এসেছে, এস আলম গ্রুপ মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারে একাধিক হোটেল কিনেছে দেশটিতে। বেশ কিছু নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা গেছে, সিঙ্গাপুরে গ্রুপটির ৩টি হোটেল আছে এবং সপ্তাহ দুয়েক আগেই তারা সিঙ্গাপুরের হায়াত হোটেলটি কিনে নিয়েছে। সিঙ্গাপুরে তাদের শপিংমল থাকার কথাও শোনা যায়। সিঙ্গাপুরে তাদের যে হোটেল ও শপিংমল আছে, তার মূল্যমান হবে কয়েকশ মিলিয়ন ডলার।’
তিনি বলেন, ‘এই যে তথ্যগুলো জানা গেল বা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসল, তখনই তো বিষয়টি তদন্তের আওতায় আনা দরকার ছিল। এবং এস আলম বিদেশে অবস্থান করার পরেও কারা কারা তাকে ঋন জালিয়াতিতে সহযোগীতা করেছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনাসহ বাংলাদেশের জানা দরকার ছিল, এই তথ্যগুলো সত্য না অসত্য।
কারন দেশ থেকে বৈধ উপায়ে বিদেশে টাকা নেওয়ার সুযোগ তো ছিল না। তাহলে একেকটি হোটেল কিনতে যে অন্তত ১৫০ থেকে ২০০ মিলিয়ন ডলার লাগে, সেটা তারা সিঙ্গাপুরে কীভাবে পেল? এই বিষয়গুলো তদন্ত করলেই বের হয়ে আসত। তখন তদন্ত করা হয়নি। কিন্তু এখন তো তদন্ত করা অপরিহার্য। ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট ও দুর্নীতি দমন কমিশন— উভয়েরই এ বিষয়ে তদন্ত করা উচিত।’ শুধু এস আলমই নয় যারা তাকে এই ঋন জালিয়াতিতে সহযোগীতা করেছে সেইসব সরকারী বেসরকারী কর্মকর্তাদেরও আইনের আওতায় আনা উচিত