গাজীপুরে নিজ প্রাইভেট কারের ভেতর শিক্ষক দম্পতির মৃত্যু নিয়ে রহস্য সাত দিন পরও উন্মোচিত হয়নি। প্রাথমিকভাবে পুলিশ ধারণা করছে, ওই দম্পতিকে হয় খাদ্যের সঙ্গে কোনো বিষাক্ত কিছু মিশিয়ে দিয়েছিলেন অথবা গাড়ির এসির গ্যাস নিঃসরণের কারণে তাঁদের মৃত্যু হয়। এ দুটি বিষয়কে সামনে রেখে চলছে তদন্ত।
শিক্ষক দম্পতি হলেন এ কে এম জিয়াউর রহমান মামুন (৫১) ও তাঁর স্ত্রী মোসা. মাহমুদা আক্তার জলি (৩৫)। মামুনের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলার দড়ি কাঁঠাল গ্রামে। তিনি টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। জলি আমজাদ আলী সরকার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। এ দম্পতি গাজীপুর মহানগরীর ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের গাছা থানাধীন কামারজুরি এলাকায় বসবাস করতেন।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ওই শিক্ষক দম্পতি স্কুল থেকে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হওয়ার পর লাশ উদ্ধারের স্থান পর্যন্ত পুরো সময়ের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু ওই সময়ের ফুটেজের কোথাও বাইরে থেকে কেউ গাড়িতে ঢুকতে দেখা যায়নি। পুলিশ দুটি বিষয় সামনে রেখে কাজ করছে। একটি হলো যদি এটি হত্যাকাণ্ড হয়ে থাকে, তাহলে তাঁদের খাদ্যের সঙ্গে বিষাক্ত কিছু মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আরেকটি হলো গাড়ির এসির গ্যাস নিঃসরণের কারণে তাঁদের মৃত্যু। উভয় কারণ যাচাই করার জন্য কিছু আলামত ও নমুনা সংগ্রহ করে ইতিমধ্যেই ঢাকায় একাধিক বিভাগের বিশেষজ্ঞ মতামত পাওয়ার জন্য পাঠানো হয়েছে। এসব প্রতিবেদন পাওয়া গেলে এই মৃত্যুর রহস্যজট খুলবে।’
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) উপকমিশনার (অপরাধ-দক্ষিণ) মোহাম্মদ উলতুৎমিশ বলেন, গত বৃহস্পতিবার ভোরে গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানার বড়বাড়ির বগারটেক এলাকার সড়কের পাশে দাঁড়ানো প্রাইভেট কারের ভেতর থেকে শিক্ষক দম্পতির লাশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন শুক্রবার রাতে জিএমপির গাছা থানায় অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে।
জিএমপির গাছা এলাকার সহকারী পুলিশ কমিশনার মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘ফুটেজ পর্যালোচনায় দেখা গেছে, তাঁরা স্কুল থেকে বের হয়ে একটি পেট্রলপাম্পে গাড়ির জ্বালানি সংগ্রহ করেন। পরে কামরুজ্জামান নামের এক সহকর্মীকে একটি স্পটে নামিয়ে দেন। সেখানে একটি দোকান থেকে পান ক্রয় করেন। তারপর গাড়িটি টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ উড়ালসড়কের নিচে কিছু সময় যানজটে আটকে থাকে। সেখান থেকে বগারটেক পৌঁছাতে তাঁদের সময় লাগে ২৫ মিনিটের মতো। এ সময়ের মধ্যে ওই গাড়ি থেকে আর কাউকে নেমে যেতে অথবা ওই গাড়িতে আর কাউকে উঠতে দেখা যায়নি। প্রাইভেট কারটি ঘটনাস্থলের কাছে এসে কিছুদূর একটু ডানে- বাঁয়ে এঁকেবেঁকে এসে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে যায়। এরপরও গাড়িটি চালু ছিল। পরে এর জ্বালানি শেষ হয়ে বন্ধ হয়।’
জিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার দেলোয়ার হোসেন বলেন, গাড়িটি শিক্ষকই চালাচ্ছিলেন। স্টিয়ারিং দুই হাতে ধরে রেখেছিলেন। দীর্ঘ সময় এভাবে থাকার কারণে তাঁর হাত শক্ত হয়ে গিয়েছিল। তিনি আরও বলেন, গাড়ি থেকে একটি খাবারের বাটি এবং উচ্ছিষ্ট কিছু খাবার সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব আলামত সংগ্রহ করে ঢাকায় পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা থেকে বিশেষজ্ঞ এনে ওই গাড়ির এসির লিকেজ হয়েছিল কি না বা কোনো বিষাক্ত গ্যাস নিঃসরণ হয়েছিল কি না, সেটিও পরীক্ষা করা হবে।
দেলোয়ার হোসেন আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে হত্যাকাণ্ড ধরে তদন্তকাজ এগিয়ে চলেছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কয়েকজনকে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে।