বিপর্যস্ত শেয়ারবাজার। প্রতিদিনই কমছে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারের দাম। এতে কমছে মূল্যসূচক ও বাজার মূলধন। কমে আসছে লেনদেনও। সোমবারও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্যসূচক ৫৩ পয়েন্ট কমেছে। এতে বাজার মূলধন কমেছে ৪ হাজার কোটি টাকা। বিনিয়োগকারীদের আস্থা তলানিতে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন শেয়ারবাজারে আস্থা সংকট। কোটা আন্দোলন কেন্দ্র করে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত। ফলে বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। অথচ এই সময়ে বিদেশ ভ্রমনে বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবায়াত উল ইসলাম।
সরকারের গুড বুকে থাকায় নানা অসংগতি আর অভিযোগ স্বত্তেও দ্বিতীয় মেয়াদে বিএস ই সি চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয় শিবলি রুবায়াত উল ইসলাম কে। পাশাপাশি শিক্ষাবিদ ও শিক্ষক হওয়ার সুবাদে তাকে জাতীয় শিক্ষা উপ কমিটির সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অথচ দেশ যখন চরম দুসময় শিবলী রুবাইয়াত দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন কানাডায়।
দেশের অর্থনীতির যখন এই ভঙ্গুর অবস্থা তখন শিবলী রুবায়াত উল ইসলাম কানাডায় অবস্থান করে দেশটি প্রাকৃতি সৌন্দর্য উপভোগ করছেন বলে জানাযায়। যদিও এটি তার জন্য নতুন কোন বিষয় নয়।
গত ৩ বছরে তিনি সরকারি খরচে প্রায় ৩৬ বার বিদেশ ভ্রমন করেছেন। তবে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি কে সামনে রেখে সাম্প্রতিক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশ এখন উত্তাল। এই সুযোগে কিছু সুযোগ সন্ধানী নানা ভাবে দেশের মূল্যবান সম্পদ ধ্বংস করেছে এবং দেশের অর্থনীতি চরম বিপর্যের মুখোমুখি হচ্ছে। শেয়ার বাজার মুখ থুবড়ে পড়েছে।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এর দায়িত্বশীল ব্যাক্তিরা যেখানে এই দূর্যোগের সমাধান খুজতে ব্যস্ত সেখানে বিএস ই সি চেয়ারম্যানের এ ব্যাপারে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই, নেই কোন দৃশ্যমান উদ্যোগ। তিনি বিদেশ ভ্রমনে ব্যস্ত। এমনিতেই শেয়ার বাজার নিয়ে তার সিদ্বান্ত বারবার বুমেরাং হয়েছে। তার এসব কর্মকান্ডে স্বার্থান্বেষী মহল সুবিধাভোগী হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে গন মাধ্যমেও তার এসব অপকর্মের খবর প্রকাশিত হয়েছে।
দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে, যেখানে শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমেছে সেই জায়গায় জাতীয় শিক্ষা কমিটির সদস্য হয়েও উনি দেশ ত্যাগ করে দায়িত্ব এড়িয়ে গেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং বর্তমানে বিএস ই সি চেয়ারম্যান এবং জাতীয় শিক্ষা উপ কমিটির সদস্য হয়েও তিনি দায়িত্ব এড়িয়ে বহাল তবিয়তে
অবস্থান করছেন দেশের বাইরে। বর্তমানে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা স্থগিত হয়ে কয়েক লাখ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে এবং শিক্ষা ব্যবস্থা স্থবির হয়ে গেছে এমতবস্থায় তার অনুপস্থিতি সংশ্লিষ্ট সবই র বিস্ময় করে।
শুধু এখানেই শেষ নয়, শিবলী রুবায়াত উল ইসলামের নামে অভিযোগ দূর্ণীতির মাধ্যমে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বানিজ্য অনুষদের ডিন থাকাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে ০৮ জন ছাত্রকে এম বি এ কোর্স এ ভর্তি করান। তিনি এসময়ে পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর কে অনৈতিক ভাবে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনে সাহায্য করেছেন টাকার বিনিময়ে।
তাছাড়া ১৯৯১ সালে তার প্রতিষ্ঠান রাইন গার্মেন্টস লিমিটের এর নামে ন্যাশনাল ব্যাংকের দিলকুশা শাখা থেকে ৭৫.৭৪ কোটি টাকা ঋন নিয়ে তা পরিশোধ না করায় ব্যাংক ২০০৫ সালে মামলা করতে বাধ্য হয় যা আজ ও নিস্পত্তি হয়নি।তার নামে অভিযোগ আছে বিভিন্ন বড় বড় ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নানা সময় ইভেন্টের নাম করে ২০-২৫ কোটি টাকা আদায়ের। একাজে তিনি তার ঘনিষ্ঠ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি কে ব্যবহার করেছেন যার নাম স্পেলবাউন্ড লিও বার্নেট এবং সিংহভাগ অর্থ নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। এরকম আরো অর্থ পাচার ও কেলেংকারীর অভিযোগ আছে শিবলি রুবাইয়াত উল ইসলামের নামে। কিন্তু সরকার কর্তৃক পরিচালিত দূর্নীতি বিরোধী অভিযানে তার নাম নেই। দেশের দুইটি গুরুত্বপূর্ন পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েও এই দুসময়ে কেন এই ব্যাক্তির দুইটি চেয়ারই ফাকা। দেশ ও সরকারে এই দু:সময়ে শিবলী রুবায়াত উল ইসলাম এখন কোথায় এই প্রশ্ন সংশ্লিষ্ট সবার।
এর আগেও গনমাধ্যমে সংবাদ আসে জালিয়াতির মাধ্যমে আসা ডলার বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াতের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে মিলিয়ন ডলার জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত একটি ব্যাংক হিসাব থেকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম অর্থ পেয়েছেন বলে জানিয়েছিলো ‘অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট’ বা ওসিসিআরপিতে প্রকাশিতএক প্রতিবেদনে।
মিলিয়ন ডলার জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত একটি ব্যাংক হিসাব থেকে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম অর্থ পেয়েছেন বলে ‘অর্গানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট’ বা ওসিসিআরপিতে প্রকাশিত জুলকারনাইন সায়ের খানের এক প্রতিবেদনে উঠে আসে ২০২৩ সালে।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক ওসিসিআরপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছিলো, এই অর্থ লেনদেনের সঙ্গে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের দুই দশকের পুরনো বন্ধু জাভেদ মতিনের নাম উঠে এসেছে যার সঙ্গে তার প্রথম দেখা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালে।
যুক্তরাষ্ট্রে আর্থিক কেলেঙ্কারিতে দোষী সাব্যস্ত জাভেদ মতিন ২০২০ সালের বড় একটি সময়জুড়ে প্রতারণা করে হংকংভিত্তিক সাপ্লাই চেইন সোর্সিং কোম্পানি মিং গ্লোবাল লিমিটেড থেকে ১৩ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত ছিলো।
সেই প্রতিবেদনে আরো জানাযায় বিনিয়োগের ছদ্মবেশে এই অর্থ মোনার্ক হোল্ডিংস আইএনসি নামের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি কোম্পানির দুইটি ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ৮ লাখ ডলার শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে এবং আরেকটি অংশ একটি বাংলাদেশি কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হয়, যেই কোম্পানির পেছনেও তিনিই আছেন বলে মনে করা হয়।