গরমের তীব্রতা বাড়ায় সারাদেশে বইছে তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপদাহ। তাপমাত্রর পারদ উঠেছে ৪২ ডিগ্রির ঘরে। এমননি রাজধানীতেও সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস উঠেছে। তীব্র তাপদাহে কোথাও স্বস্তি নেই, জনজীবনে হাঁসফাঁস অবস্থা। কাঠফাঁটা গরমের তীব্রতা এতোটাই যে জারি আছে হিট অ্যালার্ট।
এমন পরিস্থিতিতে তাপমাত্রা কতটা বাড়লো, একটুও কমলো কি না, তা নিয়ে মানুষের মধ্যেও কৌতূহল থাকছে। ঘন ঘন সবাই মোবাইল ঘেঁটে দেখে নিচ্ছেন তাপমাত্রার হিসাব। এই প্রতিবেদন লেখার সময়ও গুগলে সার্চ দেয়ার সময় তাপমাত্রা দেখালো ৩৮, কিন্তু পাশেই বলে দেয়া হয়েছে ফিলস লাইক ৪২।
এই যে ফিলস লাইক বা অনুভূত তাপমাত্রার কথা বলা হচ্ছে, সেটি আসলে কি? গরমের এই সময়ে কোন এক এলাকার যে নির্দিষ্ট যে তাপমাত্রার হিসাব দেয়া থাকে তার চেয়ে ফিলস লাইক তাপমাত্রা বেশিই থাকে। এই যেমন গুগল বলছে এখন ঢাকার তাপমাত্রা ৩৮, কিন্তু ফিলস লাইক ৪২, অর্থাৎ চার ডিগ্রি বেশি!
গুগলে কোনো নির্দিষ্ট এলাকার তাপমাত্রা জানতে চাইলে সবার উপরে দেখায় সেই হিসাব। তবে তাপমাত্রার ঠিক নীচে ছোট করে লেখা থাকে, ‘ফিল্স লাইক’। সেখানে দেওয়া থাকে তাপমাত্রার আর এক হিসাব।
এই যে ৪২ ডিগ্রির গরম অনুভূত হবার কথা বলে হচ্ছে, সেটি হলো তাপমাত্রা যাই হোক না কেন, মানুষের কাছে কেমন গরম অনুভূত হবে তার একটি নির্দেশিকা। ব্রিটেনের আবহাওয়া অফিস বলছে, ফিল্স লাইক মাপা হয় কোনও এলাকার সম্ভাব্য তাপমাত্রার পূর্বাভাস, ওই এলাকার আর্দ্রতা ও হাওয়ার গতিবেগ মেপে।
তাপমাত্রা বলতে বোঝায় কোনও নির্দিষ্ট এলাকার বাতাসের তাপমাত্রা। কিন্তু রাস্তাঘাটে বেরুলে শুধু হাওয়া নয়, আরও কিছু বিষয় তাপমাত্রায় প্রভাব ফেলে। বাতাসের আর্দ্রতা ও গতিবেগের কারণে মূল তাপমাত্রার চেয়েও বেশি গরম বা ঠান্ডা অনুভূত হয়ে থাকে। পরিবেশেরও একটা বিরাট প্রভাব আছে এতে।
গরমের সময়ে এই ফিলস লাইক বা অনুভূত তাপমাত্রা যেমন বেশি থাকে, তেমনি শীতের সময় ঠিক উল্টো। তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও তার ‘ফিল্স লাইক’ পৌঁছে যায় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। অর্থাৎ, ওই এলাকার মানুষ আসলে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো ঠান্ডা অনুভব করছেন।
কী ভাবে অনুভূত তাপমাত্রাকে প্রভাবিত করে বাতাসের আর্দ্রতা এবং হাওয়ার গতি? আবহাওয়াবিদদের মতে, বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলে ঘাম বেশি হয়। কিন্তু সেই ঘাম বাষ্পের সঙ্গে মিশে যেতে সময় বেশি লাগে। শরীর ঠান্ডা হতে পারে না, তখন গরম কিছুটা বেশি লাগে। অস্বস্তির পরিমাণও বেড়ে যায়।
আবার বাতাসের উষ্ণতা যা-ই থাক না কেন, প্রবাহ বেশি থাকলে, অর্থাৎ হাওয়া বইলে তাপমাত্রা কম অনুভূত হয়। সে ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়ে গরমের অনুভূতির উপর। ফিল্স লাইক পরিমাপের সময়ে ভূমি থেকে পাঁচ ফুট উপরের হাওয়ার গতি মেপে দেখা হয়। সেই হিসাবটাই প্রকাশ করা হয়। গুগলেও তা-ই লেখা থাকে।
গরমের অস্বস্তি কমার কোনও লক্ষণ আপাতত নেই। স্বস্তির খবর শোনাতে পারেনি আবহাওয়া অফিস। বরং ভয়ের খবর, এপ্রিল জুড়েই থাকবে তাপদাহ। পারদ আরও চড়তে পারে। কোথায় কোথায় সামান্য বৃষ্টি হতে পারে, তবে তাতে গরমের তীব্রতা কমবে না। আরও ভয়, মে মাসেও নাকি তাপদাহ থেকে মুক্তি নেই।