বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি পৌঁছানোর উৎসব মুহূর্তে রূপ নেয় মৃত্যুশোকে। ছেলে বৌমাকে নিয়ে বাবা নিজেই গাড়ি চালিয়ে রওয়ানা হয়েছিলেন বেয়াইবাড়িতে। যাওয়ার পথে রাজধানীর উত্তরায় জসীম উদ্দীন মোড়ে ঘটে দুর্ঘটনা। নির্মাণাধীন বিআরটি প্রকল্পের গার্ডার পড়ে প্রাইভেটকারের ৫ আরোহী নিহত হন। আর অল্পের জন্যই বেঁচে যান নবদম্পতি হৃদয়-রিয়া।
মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) সময় সংবাদকে সেই দুর্ঘটনার হৃদয় বিদারক বিবরণ দেন বেঁচে যাওয়া ওই যুবক।
হৃদয় বলেন, সম্প্রতি আমরা বিয়ে করেছি। সোমবার আমাদের বৌভাত ছিল। বৌভাত শেষে স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিলাম। আমাদের যেহেতু গাড়ি আছে, তাই আমার বাবা বলেন, গাড়ি করে তোমাদেরকে শ্বশুরবাড়িতে দিয়ে আসি। আমি, আমার স্ত্রী, আমার বাবা, শাশুড়ি এবং খালা শাশুড়ি ও তার দুই বাচ্চাসহ আমরা গাজীপুরের উদ্দেশে কাওলা বাজার থেকে রওয়ানা দেই। আমার বাবা গাড়ি চালাচ্ছিলেন। আমি ছিলাম পাশের সিটে। আমার স্ত্রী গাড়ির পেছনে ছিলেন।
‘গাড়ি চলা অবস্থায় দেখেছি, স্লাবটা ঝুলছিল। আমরা বুঝতে পারিনি যে ওইটা আমাদের ওপরেই পড়বে। স্লাবটার নিচ দেয়ে সব গাড়ি যাচ্ছিল। বাবা মনে করেছিলেন, আমরাও চলে যেতে পারব। কিন্তু স্লাবটা ক্রস করতে যাওয়ার সময়ই ওইটা আমাদের গাড়ির ওপর পড়ে। এতে গাড়ির ডান পাশ একেবারে ডেবে যায়। এতে আমি ও আমার স্ত্রী ছাড়া বাকি সবাই ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। আমরা বাম পাশে থাকায় বেঁচে যাই। গাড়িতে চাপা অবস্থায় ছিলাম। আশপাশের লোকজনসহ পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে হাসপাতাল নিয়ে যায়,’ বলেন ওই যুবক।
তিনি বলেন, ওই স্লাবটার নিচ দিয়ে অন্যান্য গাড়ি যেভাবে যাচ্ছিল, আমাদেরটাও সেভাবেই যাচ্ছিল। স্লাবটা ওপরে ঝুলছিল। ওইটা যদি ঝুঁকিপূর্ণই হবে, তবে এভাবে তারা কেন কাজ করবে?
তিনি আরও বলেন, এত বড় একটা স্লাব রাস্তার ওপর ঝুলিয়ে রেখে এভাবে কাজ করাটা তো ঝুঁকিপূর্ণ। একটা গাড়ির ওপর পড়েছে। কিন্তু এটা তো একাধিক গাড়ির ওপরও পড়তে পারত। এ ঘটনায় সরকারের কাছে বিচার আশা করি।
পুলিশ জানায়, সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এক পথচারীর মাধ্যমে দুর্ঘটনার খবর পান তারা। প্রাইভেটকারটিতে ৭ জন যাত্রী ছিলেন। তাদের ৫ জনই মারা গেছেন।
তারা হলেন-হৃদয়ের বাবা রুবেল (৬০), হৃদয়ের শাশুড়ি ফাহিমা (৪০), রিয়া মনির খালা ঝরনা (২৮), ঝরনার দুই সন্তান জান্নাত (৬) ও জাকারিয়া (২)।
পরে, উদ্ধার অভিযানে ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে অংশ নেয় ফায়ার সার্ভিস। গার্ডারটি তুলতে ২০০ টনের ক্রেন আনতে দেরি হয় বেশ কিছুটা সময়। সবশেষ ৪ ঘণ্টা পর, উদ্ধার করা সম্ভব হয় ৫ জনের মরদেহ।
যে ক্রেনটি দিয়ে গার্ডারটি তোলা হচ্ছিল তার ধারণক্ষমতা কম ছিল বলেও জানায় এমআরটি প্রকল্পের কর্মকর্তা ও ফায়ার সার্ভিস।
এর আগে, গত ১৫ জুলাই গাজীপুরে একই প্রকল্পের ‘লঞ্চিং গার্ডার’ চাপায় এক নিরাপত্তারক্ষী নিহত হন। এতে একজন শ্রমিক ও একজন পথচারী আহত হন।