মালবিকার মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নীল ছবি থেকে ফিরে আসা নায়িকা গহনা।
গত কয়েক বছরে একের পর এক মৃত্যু শোবিজ অঙ্গনে । বলিউডের রঙিন দুনিয়ায় কালো অন্ধকারে যেন ছেঁয়ে যাচ্ছে। সোমবার নিজ ফ্ল্যাট থেকে নুর মালবিকা দাসের পচাগলা দেহ উদ্ধার হতেই থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজার জানিয়েছে, পুলিশের অনুমান, ৬ জুন মৃত্যু হয়েছে এই অভিনেত্রীর। আত্মহত্যাকেই প্রাথমিক কারণ হিসেবে ধারণা করা হয়েছে। মালবিকা মূলত নীল ছবির নায়িকা। এই নিয়ে তার কোনও আপত্তি নাকি ছিলো না। হাতেও ছিল প্রচুর কাজ। তার পরেও কেন তিনি আত্মহত্যা করলেন?
এ বিষয়ে মঙ্গলবার সে দিকেই আঙুল তুললেন নীল ছবির দুনিয়া ছেড়ে আসা আর এক অভিনেত্রী গহনা বশিষ্ট। তিনি বলেন, ‘নীল দুনিয়ার নায়িকার টাকা নিতে আপত্তি নেই। বিয়ে করে তাকে সম্মান দিতে গেলেই সমস্যায় পড়েন প্রেমিকেরা। একা হয়ে যাওয়া সেই মেয়েটি তখন বাধ্য হয়েই আত্মহত্যা করে।’
মালবিকা শুধুই যে নীল ছবি বা সিরিজে অভিনয় করতেন, তেমন নয়। পাশাপাশি তাকে দেখা গিয়েছিল কাজল অভিনীত ‘দ্য ট্রায়াল’ সিরিজ়েও। তা হলে কি এই অভিনেত্রী ‘অ্যাডাল্ট ইন্ডাস্ট্রি’ থেকে বেরনোর চেষ্টা করছিলেন? এক বার গায়ে বিশেষ ছাপ পড়ে গেলে নাকি সহজে সেখান থেকে মুক্তি মেলে না। বলিউডও তাকে কি গ্রহণ করতে চায় নি? তবে ব্যতিক্রম সানি লিওনি।
তেমন কিছেই কি মালবিকার সঙ্গেও ঘটেছিল প্রশ্নে গহনার অকপট মন্তব্য, ‘হ্যাঁ, এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করা মেয়েদের শুধু বলিউডে নয়, নিজেদের বাড়িতেও গ্রহণযোগ্যতা নেই। কিন্তু মালবিকার তেমন কোনও সমস্যা ছিলো না। তার হাতে প্রচুর কাজ ছিল। এই দুনিয়ায় তিনি খুশিও ছিলেন।’
তাহলে নেপথ্য কারণ কী? এই উত্তর দিতে গিয়ে গহনা তুলে ধরেছেন বলিউডের ভেতরের ছবি। জানিয়েছেন, ‘এমনিতেই মুম্বইয়ে কাজ করতে আসা অভিনেত্রীদের বন্ধুর সংখ্যা খুবই কম। পাশাপাশি, পরিবারের থেকেও তেমন সমর্থন পান না। পুরুষ অভিনেতাদের ক্ষেত্রে কিন্তু উল্টো চিত্র। তাদের পাশে সব সময় তাদের পরিবার থাকে। একটা সময়ের পরে তথাকথিত তারকা না হয়ে উঠতে পারা অভিনেত্রীরা একা হয়ে যান। তখন বেশি করে প্রেমিকের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। প্রেমিক যখন বিশ্বাসঘাতকতা করেন, তখন তাদের আত্মহত্যা ছাড়া অন্য কোনও পথ থাকে না।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘আপনারা জানেনই না, কত পুরুষের সংসার এই অভিনেত্রীদের অর্থে চলে! এদের টাকা নিতে কোনও আপত্তি নেই। যেই সম্মান দেওয়ার প্রশ্ন ওঠে ঠিক তখনই বিপত্তি। প্রেমিক পিছু হটতে থাকেন। মেয়েটি আরও একা হয়ে পড়েন।’
গহনাও এক সময় নীল ছবির নায়িকা ছিলেন। বহু বছর পর সেই জগত থেকে বেরিয়ে এসেছেন। তার মতো অন্যেরাও এভাবে বেরিয়ে আসতে চাইলে কী করবেন? গহনার মতে, ‘প্রচণ্ড জেদি হতে হবে। লড়ে জায়গা আদায় করতে হবে। মন খুলে কথা বলতে হবে। নিজের প্রয়োজনের কথা জানাতে হবে।’ তার কথায়, ‘কখনও পুরুষের হাতে আপনার সিন্দুকের চাবি তুলে দেবেন না। যারা দিয়েছেন, তারাই মরেছেন। এক বার নারীর উপার্জন ভোগের অধিকার কোনও পুরুষ পেয়ে গেলে সে আর নারীকে সম্মান দেওয়ার কথা মাথায় আনে না।’
গহনার কাছে ‘অবসাদ’ শব্দের কোনও অস্তিত্ত্ব নেই। তার মতে, নারীর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ ঢাকার জন্যই এই শব্দের যথেচ্ছ ব্যবহার। সেই জায়গা থেকে বাকি ‘মালবিকা’দের জন্য তার বার্তা, ‘যখন একা লাগবে আমায় ফোন করুন। যখনই কাজ পাবেন না, আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। আমি সারাক্ষণ আপনাদের জন্য রয়েছি। মনের ভার লাঘবের চেষ্টা করব। কাজের ব্যবস্থাও করে দেব।’