নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে সম্ভবত সবচেয়ে বেশী যে হাসপাতালের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ আজ পর্যন্ত এসেছে সেই প্রতিষ্ঠানের নাম ল্যাব এইড। এই ল্যাব এইড হাসপাতালের বিরুদ্ধে ভূল চিকিৎসায় রোগী হত্যা ছাড়াও হেনো কোনো অভিযোগ নেই যা রোগী বা রোগীর স্বজনরা করেনী। শুধু তাই নয় বাংলাদেশে চিকিৎসা কেন্দ্র হিসেবে সবচেয়ে বেশী উচ্চ আদালত কতৃক জরিমানার শাস্তি পাওয়া প্রতিষ্ঠানের নামও এই ল্যাব এইড।
গত কিছুদিন আগেও ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় এইচএসএসি শিক্ষার্থী তাহসিন হোসেন নামের এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগে হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ মোট সাতজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।সাত অভিযুক্ত হলেন: ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এ এম শামীম, শাখা ব্যবস্থাপক (ধানমন্ডি) মো. শাহজাহান, ডা. মো. সাইফুল্লাহ, ডা. মাকসুদ, ডা. সাব্বির আহমেদ, ডা. মোশাররফ ও ডা. কনক। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ফারাহ দিবা ছন্দার আদালতে বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন ওই কিশোরের বাবা মনির হোসেন।
নিহত কিশোর বাবা মনির ল্যাব এইডের ডা. সাইফুল্লাহকে অনেকবার জিজ্ঞেস করে তার ছেলের সমস্যা কী। কিন্তু উনি কোনোবারই সঠিক করে কিছুই বলতে পারেননি। অথচ তার দুইবার অপারেশন করা হয়েছে। সেটা যে ভুল চিকিৎসা ছিল। প্রথম অপারেশনের পর ছেলেকে ভারতে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যেতে চাইলেও ল্যাবএইড কর্তৃপক্ষ রোগীকে ছাড়পত্রও দেয়নি।
২০১৪ সালে কুমিল্লা দাউদকান্দি পৌরসভার মেয়র নাসির উদ্দিন আহমেদেকেও ভূল চিকিৎসায় হত্যার অভিযোগ আদালতে মামলা দায়ের করে নিহতের স্ত্রী মাহমুদা আহাম্মেদ। মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে, শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য নাসির উদ্দিন আহমেদ ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতালে এলে চিকিৎসকরা তাকে এনজিওগ্রাম শেষে ওপেন হার্ট সার্জারির পরামর্শ দেন।
কেবল আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য রোগীর ফুসফুসে পানি জমে থাকার বিষয়টি গোপন করেই ৫ এপ্রিল সার্জারি করেন চিকিৎসকরা। পরবর্তীতে শ্বাসকষ্টসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। ডাক্তারদের ভুল চিকিৎসা এবং অবহেলার কারণে ২০১৪ সালের ২৫ এপ্রিল নাসির উদ্দিন মারা যান।
রোগির পরিবারের কাছ থেকে ওপেন হার্ট সার্জারি, কিডনি ডায়ালাইসিস এবং অন্যান্য খরচ বাবদ ৫ লাখ টাকা গ্রহণ করে ল্যাব এইড হাসপাতাল।সেই সময়েও অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ এনে ল্যাব এইড কার্ডিয়াক হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এএম শামীমসহ ৫ ডাক্তারের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা তদন্তে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয় আদালত।
২০১৭ সালে সাংবাদিক প্রভাষ আমীন তার একটি কলামে অভিযোগও করেন ল্যাবএইডের বিরুদ্ধে গাদা গাদা অভিযোগ শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা। ল্যাবএইড পকেট কাটে, এটা যেন গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে গেছে। কারন কেউ কিছু বলেনা। আর কেউ কিছু বলেনা এই সুযোগে একটি কসাইখানায় পরিনত হয়েছে চিকিৎসার নামে মানুষের পকেট কাটা এবং হত্যার অন্যতম প্রতিষ্ঠান ল্যাব এইড।
সম্প্রতি গত ১৮ জানুয়ারী এক কার্ডিয়াক রোগী ধানমন্ডির ল্যাব এইড কার্ডিয়াক হাসপাতালে ভর্তি হয়। তার স্বজনরা হাসপাতাল কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেন সুচিকিৎসার জন্য। স্বজনরা জানতেন যে কোনো বাইপাস সার্জারিসহ বিভিন্ন সার্জারির প্যাকেজ চিকিৎসার পাচলাখ টাকার এদিক সেদিক। যথারীতি ডাক্তার লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে কার্ডিয়াক পেশেন্টের বাইপাস সার্জারি হয়।
কিন্তু যখন রোগী বিল দিতে যায় তখন জানানো হয় তার বিল হয়ে গেছে বারোলাখ টাকার ওপরে। কারন জানতে চাইলে এদিক সেদিক গোজামিল দিয়ে রোগীর কাছ থেকে প্রায় সাড়ে বারোলাখ টাকা হাতিয়ে নেয় হাসপাতাল কতৃপক্ষ। পরে ল্যাব এইডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা: এএম শামীম ও লুৎফর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে অতিরিক্ত এই টাকা নেয়ার বিষয়ে কোনো সদূত্তর দিতে পারেনী তারা।
রোগী জানান অতিরিক্ত টাকা নেয়ার দায়ে ল্যাব এইড এবং ডাক্তার এএম শামীম ও লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধ মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। তবে এটিও আশংকা ডাক্তার শামীম এবং ডাক্তার লুৎফরের দৌরাত্বের কারনে সুবিচার পাবে কিনা তাতে সন্দেহ রয়েছে। তবুও আইনানুগ ব্যবস্থার দিকে যাবে তারা।
এদিকে ল্যাব এইডের এই জাতীয় দৌরাত্ব এবং নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে কি করণীয় সেই বিষয় জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পচিালক ক্লিনিক এন্ড হসপটিালের পরিচালক ডাক্তার মাইনুল আহসান জানান কোনো হাসপাতালের বিরুদ্ধে কারো অভিযোগ থাকলে তারা যেনো প্রথমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বরাবর লিখিত অভিযোগ করে। অভিযোগ হাত পেলেই তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করবে অধিদপ্তর।
তবে ল্যাব এইডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডাক্তার এএম শামীমের বিরুদ্ধে ল্যাব এইড প্রতিষ্ঠার পর থেকে যত অভিযোগ এসেছে কোনো হাসপাতালের মালিকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ চোখেও পড়েনী কারো। তারপরও ডাক্তার শামীম থেকে যাচ্ছে ধরা ছোয়ার বাইরে। চিকিৎসার নামে কসাইখানা চালু হওয়া ল্যাব এইডের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করবে এটা এখন গনদাবীতে পরিনত হয়েছে বলে জানায় ভুক্তভুগিরা।