কিংবদন্তি গীতিকার, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও প্রযোজক গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মরদেহ সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হয়েছে। সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টার দিকে মাজহারুল আনোয়ারের মরদেহ শহীদ মিনারে নেওয়ার পর ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়া হয়। রাষ্ট্রীয় শ্রদ্ধা শেষে সর্বস্তরের মানুষ তার মরদেহে ফুলেল শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন।
শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটে’র উদ্যোগে আগেই মঞ্চ তৈরি করা হয়। এর আগে মরদেহ রাখা হয়েছিল হাসপাতালের হিমঘরে। অপেক্ষা ছিল গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মেয়ে দিঠির। তিনি যুক্তরাষ্ট্র থাকেন। গতকাল রাতে তিনি দেশে ফেরেন।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যবস্থাপনায় সেখানে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর এই গীতিকারকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন জোটের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহ। মাজহারুল আনোয়ারের ছেলে সরফরাজ আনোয়ার উপল তার বাবার মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়ার কথা গতকালই জানিয়েছিলেন। শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বনানীতে নেওয়ার আগে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনেও (বিএফডিসি) নেওয়া হবে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের কফিন। জোহরের পর সেখানে জানাজায় অংশ নেবেন তার দীর্ঘদিনের সহকর্মী ও কলা-কুশলীরা।
বাদ আসর গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মরদেহ রাখা হবে গুলশানের আজাদ মসজিদে। সেখানে অনুষ্ঠিত হবে দ্বিতীয় জানাজা। এরপর বনানী কবরস্থানে মা খোদেজা বেগমের কবরের পাশে সমাহিত করা হবে তাকে।
রবিবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হলে গাজী মাজহারুল আনোয়ারকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
অসংখ্য কালজয়ী গানের রচয়িতা গাজী মাজহারুল আনোয়ার। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান লিখেছেন। ২০ হাজারেরও বেশি গানের রচয়িতা তিনি। ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ ও ‘আছেন আমার মোক্তার আছেন আমার ব্যারিস্টার’ তার লেখা তুমুল জনপ্রিয় দুটি গান। বিবিসি বাংলার জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ২০টি বাংলা গানের তালিকায় স্থান পেয়েছে তার লেখা তিনটি গান।
গাজী মাজহারুল আনোয়ার ‘পীচ ঢালা পথ’, ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘দীপ নেভে নাই’, ‘অবুঝ মন’, ‘চাষীর মেয়ে’, ‘সূর্যগ্রহণ’, ‘অনন্ত প্রেম’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘অশিক্ষিত’, ‘ডুমুরের ফুল’, ‘মহানগর’, ‘নতুন বউ’, ‘নাজমা’, ‘অভিযান’, ‘মা ও ছেলে’, ‘রাজলক্ষী শ্রীকান্ত’, ‘রাঙা ভাবী’, ‘ছুটির ফাঁদে’, ‘বাবার আদেশ’, ‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা’সহ অসংখ্য চলচ্চিত্রে গান লিখেছেন।
২০০২ সালে ‘একুশে পদক’ লাভ করেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। ২০২১ সালে তিনি সংস্কৃতিতে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ অর্জন করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য গাজী মাজহারুল স্বাধীন দেশের সর্বপ্রথম পুরস্কার ‘বাংলাদেশ প্রেসিডেন্ট গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন। এছাড়াও গাজী মাজহারুল আনোয়ার পাঁচবার ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’, একাধিকবার ‘বাচসাস পুরস্কার’, ‘বিজেএমই অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন।