বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার হুমায়ন কবীর পল্লব এ নোটিশ পাঠান। স্বরাষ্ট্র সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
পরে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন জানান, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা শুনানির জন্য বেঞ্চ গঠন করতে প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। আর জজ মিয়া ক্ষতিপূরণের মামলা করলে আইনিভাবেই দেখা হবে সেটি।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার লক্ষ্যে তার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি সমাবেশে এ নারকীয় গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা সেদিন অল্পের জন্য ভয়াবহ হামলা থেকে বেঁচে যান। তবে আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমান ও অপর ২৪ জন এতে নিহত হন। এ ছাড়া এ হামলায় আরও ৪০০ জন আহত হন। তাদের অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন। তাদের কেউ কেউ আর স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাননি।
বিএনপি জোট সরকার এ হামলা মামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে প্রথম থেকেই। প্রথমে গ্রেফতার করা হয় শৈবাল সাহা পার্থ নামে এক তরুণকে। কদিন পর গ্রেফতার করা হয় মগবাজার এলাকার সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের নেতা মোখলেছুর রহমানকে। তাদের ফাঁসাতে না পেরে পরের বছর ২০০৫ সালের ৯ জুন নোয়াখালীর সেনবাগ থেকে ধরে আনা হয় জজ মিয়া নামের এক যুবককে।
জজ মিয়াকে ১৭ দিন রিমান্ডে রেখে, ভয়ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে তার কাছ থেকে একটি সাজানো জবানবন্দি আদায় করে সিআইডি। ২০০৫ সালের ২৬ জুন আদালতে দেয়া ওই কথিত স্বীকারোক্তিতে জজ মিয়া বলেছিলেন, তিনি আগে কখনো গ্রেনেড দেখেননি; গ্রেনেড ও বোমার মধ্যে পার্থক্য তিনি জানেন না। পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে বড় ভাইদের নির্দেশে তিনি অন্যদের সঙ্গে গ্রেনেড হামলায় অংশ নেন। ওই বড় ভাইয়েরা হচ্ছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন, জয়, মোল্লা মাসুদ, মুকুল প্রমুখ।
এ জবানবন্দির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ২৯ জুন একটি বহুল আলোচিত দৈনিকে দুটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। একটির শিরোনাম ছিল ‘এই গল্পের গাঁথুনি দুর্বল/স্বীকারোক্তিতে সাত অসংগতি’। অপরটির শিরোনাম ‘সেই জজ মিয়া তারকা সন্ত্রাসী’। সঙ্গে ছাপানো হয়েছিল শিশির ভট্টাচার্যের সেই বিখ্যাত কার্টুন (আষাঢ় মাস…জমেছে আষাঢ়ে গল্পের আসর)। তবে সিআইডি সাজানো ছকেই তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকে। ২০০৬ সালের আগস্টে এ নাটকের পেছনের ঘটনা ফাঁস করে দেন জজ মিয়ার ছোট বোন খোরশেদা বেগম।
ওই সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, জজ মিয়াকে গ্রেফতারের পর থেকে সিআইডি তার পরিবারকে মাসে মাসে ভরণপোষণের টাকা দিয়ে আসছে। জজ মিয়াকে গ্রেনেড হামলা মামলায় রাজসাক্ষী করতে সিআইডির প্রস্তাবের কথাও ফাঁস করে দেন তিনি। ২০০৬ সালের ২১ আগস্ট ‘জজ মিয়ার পরিবারকে টাকা দেয় সিআইডি’ শিরোনামে শীর্ষ প্রতিবেদন ছাপা হয়। এরপর জোট সরকার আর ‘জজ মিয়া গল্প’ নিয়ে এগোতে পারেনি।
২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসে নতুন করে এ মামলার তদন্তের উদ্যোগ নেয়। তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ১১ জুন এ-সংক্রান্ত মামলা দুটির অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। অব্যাহতি দেয়া হয় জোট সরকারের আমলে গ্রেফতার হওয়া জজ মিয়া, পার্থসহ ২০ জনকে।