বাদুলা ত্রিপুরা।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বসবাসরত মারমা সম্প্রদায়ের ভাষা এটি। নাইঃ-মানে দেবতা আর ক্য়োওঃ- মানে পাথর। দু’টি অর্থ যোগ করলে হয় দেবতা পাথর। তবে, মারমাদের পাশাপাশি বান্দরবান এবং রাঙামাটির কিছু অংশের ত্রিপুরা(উসুঁই)সম্প্রদায়ের লোকেজনও নাইঃ ক্য়োওঃ নামেই চেনে বা ডাকে।
ত্রিপুরা(উসুঁই)সম্প্রদায়ের লোকদের বিশ্বাসঃ দেশে অনাবৃষ্টি –খরা- তীব্র্র তাপদাহে চারদিক যখন এক পশলা বৃষ্টির জন্য সবাই হাহাকার থাকে, তখন তাৎক্ষণিক ও আশ্চর্য্যজনকভাবে আকাশ থেকে বৃষ্টি নামিয়ে জনজীবনে স্বস্তি আনতে পারে এই পাথর(নাইঃ ক্য়োওঃ)।এমন বিশ্বাস বা ধারণা ত্রিপুরা সমাজে প্রচলিত আছে। তাই মনে বিশ্বাস নিয়ে অনেকেই তাদের মনের বাসনা পূরণের উদ্দেশ্যে ওই পাথরের কাছে ছুটে যান।
প্রথমে, পাথরের উপর কলাপাতার উপর ফুল দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়, পরে পাথরটিকে পানি দিয়ে পুরো ভিজিয়ে দিয়ে বৃষ্টির কামনা করে প্রার্থনা করেন তাঁরা। আর তাদের মনের বাসনা পূরণ করতে আকাশ থেকে বৃষ্টি ঝরে।
পাথরটি মঙ্গল-অমঙ্গল দুটিই করতে পারে এমন লোকপ্রথা চালু আছে সমাজে। এইজন্য নাইঃক্য়োওঃ এর অসম্মান হয় এমন সব কার্যকলাপ থেকে দূরে থাকে সবাই। যেমন-পাথরের উপরে না উঠা, মূত্রের ফোঁটা পাথরের গায়ে কোনভাবেই না লাগা। পাছে, তাদের অমঙ্গল হয়। যদিও, এর সত্যতা নিয়ে বৈজ্ঞানিক কোন ব্যাখ্যা তাদের নেই।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা পার্বত্য অঞ্চলের সারি সারি উঁচু-নিচু পাহাড়।পাহাড়ের প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে অসংখ্য ছড়া-ঝিড়ির দেখা মেলে সচরাচর। আর এসব ছড়া বা ঝিড়িতে বিভিন্ন আকারের ছোট-বড়-মাঝারি আকৃতির পাথর পড়ে থাকে।পানির অংশে থাকা এসব ছোট-বড় পাথরের খাঁজে খাঁজে মাছ, চিংড়ি ও কাঁকড়ার বাস ।
সাধারণত পাহাড়ে বসবাসরত আদিবাসীরা মূলত এসব পাথরের নিচে বা খাঁজ থেকে মাছ,কাঁকড়া, চিংড়ি ও শামুক সংগ্রহ করে তাঁদের শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে থাকে। তবে, সব পাথর হতে মাছ-চিংড়ি সংগ্রহ করলেও এই বিশেষ পাথর (নাইঃক্য়োওঃ)থেকে সংগ্রহ করতে বিরত থাকে সবাই।
বাদুলা ত্রিপুরা, গণমাধ্যমকর্মী।