নিজস্ব প্রতিবেদক: অবশেষে সত্যি হতে যাচ্ছে ইনসাইড বিজনেস নিউজের সংবাদ। গত ২৭ মে ইনসাইড বিজনেস নিউজে “ মার্কিন নিষেধাজ্ঞার থাকছে এস আলম এবং আদিল, আকিজের নাম” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রচার হয়। সংবাদটি প্রচারের পর নড়েচড়ে বসে মার্কিন কংগ্রেস নেতারা থেকে শুরু করে ফেডালে রিজার্ভ এবং হোয়াইট হাউজের নেতৃবৃন্দ। পরবর্তীতে তারা ইনসাইড বিজনেস নিউজ এই ইংরেজি পত্রিকা ইকোনোমিস্ট টাইমসের সম্পাদকদের সাথে কথা বলে বাংলাদেশে মালি লংন্ডারিংয়ের সাথে ব্যবসায়ী এস আলরেমর যোগসূত্র খুজে পায়। তারই অংশ হিসেবে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সচিব মাহবুব হোসেনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বৈশ্বিক দুর্নীতি দমনবিষয়ক সমন্বয়ক রিচার্ড নেফিউ।
রোববার বেলা ৩টা ৪০ মিনিটে রিচার্ড নেফিউর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল দুদক প্রধান কার্যালয়ে আসেন। পরে প্রতিনিধিদলটি দুদক সচিবের কক্ষে বৈঠক করেন। সোমবার তিনি ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এবং পরে পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘নেফিউ বলেছেন যে বিশ্বব্যাপী দুর্নীতি বিরোধী কার্যক্রমকে যুক্তরাষ্ট্র অগ্রাধিকার দিচ্ছে। ভবিষ্যতে এটি ব্যবসা ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তাকে সক্ষমতা বৃদ্ধির কথা বলেছি এবং যেসব দেশে অবৈধভাবে অর্থ গেছে তাদের সহায়তা পাওয়ার কথা বলেছি।’
এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে ওঠা টাকা পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নির্দেশনা পেলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কের সাথে তারা কাজ করবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার বিকেলে সফররত যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক দুর্নীতি দমন বিষয়ক সন্বয়ক রিচার্ড নেফিউ পররাষ্ট্র সচিবের সাথ বৈঠক করেন। পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।
এস আলমের বিরুদ্ধে ওঠা ১০ হাজার কোটি টাকা পাচারের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের কী করছে জানতে চাইলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, যদি দুদক এ বিষয়ে অনুরোধ করে তবে আমরা আইনের মধ্যে থেকে যেটা করার সেটা করবো।’
পররাষ্ট্র সচিব সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশের আইন ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার প্রশংসা করেন রিচার্ড নেফিউ। বাংলাদেশের কোনো নাগরিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ব্যক্তি বিশেষের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়াকে দুর্নীতি প্রতিরোধে একটি উপায় হিসেবে দেখে যুক্তরাষ্ট্র। শুধু বাংলাদেশ নয় এটি পুরো বিশ্বের জন্যই প্রযেজ্য।
১১ জনের ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিক খবরের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘তিনি (রিচার্ড নেফিউ) নিজেও একসময় এই স্যাংশন বিষয়ক কর্মকর্তা ছিলেন। তবে এ বিষয়ে তারা কোনো ব্যক্তির বিষয়ে বলেনি।’
পররাষ্ট্র সচিব জানান, অর্থপাচার প্রতিরোধে কিভাবে দুই দেশ সহায়তা করতে পারে সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। রিচার্ড নেফিউ মঙ্গলবার ঢাকা ছেড়ে যাবেন। মার্কিন এই কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে তার প্রতিবেদন দাখিল করবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পররাস্ট্র মন্ত্রনালয়ের এক কর্মকর্তা জানান , মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় পড়বে এস আলম তার ছেলে স্ত্রী এবং এস আলম গ্রূপের সাথে যেসব পরিচালক এস আলমের স্বজন রয়েছে তারা। তাছাড়া এস আলমের বিভিন্ন ব্যাংকে যেসব শীর্ষ কর্মকর্তারা রয়েছে তারাও এই নিষেধাজ্ঞায় আওতায় আসবে।
২০২১ সালে র্যাব এর বর্তমান ও সাবেক ৭ কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ছিলো একটি বড় বার্তা। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের মাঠ সমতল করার অংশ হিসেবেই ২০২১ সালেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পুলিশ এবং র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। সে সময় নিষেধাজ্ঞায় ৭ জনের নাম জানা গেলেও এই তালিকায় রযৈছে আরো অনেকেই। এরই মধ্যে গেলো মঙ্গলবার মার্কিট স্টেট ডিপার্টমেন্ট একটি ব্লাংক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে রেখেছে। জানাযায় আগামী নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এই সংখ্যা ৩ হাজার বা এর থেকেও বেশি হতে পারে।
নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আমেরিকা যে বার্তাটি দিচ্ছে– একটি সভ্য রাষ্ট্রের জন্য হিউম্যান রাইটস গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। এখানে যে কাণ্ডটি ঘটেছে তা আসলেই ন্যক্কারজনক। নাগরিকদের নিরাপত্তার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। এখন রাষ্ট্রীয় সংস্থা এবং তাদের সহায়তায় যদি মানবাধিকার হরণ এবং সম্পদ লুট হয় তার চাইতে ন্যক্কারজনক আর কিছু হতে পারে না। এটা একটি লাতিন সিন্ড্রম। লাতিন আমেরিকায় একসময় এমন কর্মকাণ্ড ঘটতো। সেটি আমাদের দোরগোড়ায় এসে দেখা দিয়েছে বলে মনে করেন কেউ কেউ।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ঘোষিত ভিসা নীতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা যে কোনো বাংলাদেশি নাগরিকের ভিসা প্রদানে বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাস্ট্র জানায় এই নীতি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী বা জড়িত যে কোনো ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অন্য অনেকের সঙ্গে বাংলাদেশের বর্তমান বা সাবেক কর্মকর্তা/কর্মচারী, সরকারের সমর্থক এবং বিরোধী দলীয় সদস্যরা এবং অনেক ব্যবসায়ী এখানে অন্তভুক্ত। এ ধরনের ব্যক্তিদের নিকটতম পরিবারের সদস্যরাও এর অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
এই ঘটনার পর থেকে জোরে শোরে বাংলাদেশী ব্যাবসয়ী সাইফুল আলম মাসুদ বা এস আলমের নাম শোনা যাচ্ছে। কা্রন বাংলাদেশে থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারে লুটপাটের সাথে এস আলমের নাম বার বার চলে আসে। সবশেষ ইসলামী ব্যাংক থেকে ত্রিশ হাজার কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ আসার পরেও বর্তমান সরকার এস আলমের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করেনী। উল্টো প্রধানমন্ত্রী বেসরকারী বানিজ্য বিষয়ক উপদেষ্টা সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এস আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনতে অনেকটা অনিহা প্রকাশ করেন। আর তার কদিন পরেই মির্কন যুক্তরাস্ট্রের এই ধরনের সিন্ধান্তে অনেকটা নড়েচড়ে বসেছে ব্যবসায়ী মহল।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় ব্যাংক পাড়া আরো দুটি নাম শোনাযাচ্ছে একজন হচ্ছেন সাইফুল আলমের ভাগিনা গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক মোহাম্মদ মোস্তান বিল্লাহ আদিল এবং ফাস্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং এস আলমের পিএস আকিজ উদ্দিনের নাম। কারন বছরের বেশিরভাগ সময়ে এস আলম দেশের বাইহরে অবস্থান করেন। আর বাংলাদেশে তার হয়ে সকল কিছুর দায়িত্ব পালন করেন আদিল বিল্লাহ এবং আকিজ উদ্দিন। ব্যাবসায়ী এস আলমের নিষেধাজ্ঞার সাথে সাথে পরিবারের সদস্য এবং ঘনিষ্টজন হিসেবে আদিল আকিজের নাম থাকতে পারে বলে জোর গুন্জন ব্যাংক পাড়ায়।