চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় এক শিক্ষার্থীকে রুমে ডেকে নিয়ে ৩ ঘণ্টা ধরে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) মতিহার হলের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর সাহার বিরুদ্ধে।
এ সময় তার গলায় ছুরি ধরে বুয়েটের আবরারকে যেভাবে মেরে ফেলা হয়েছে ঠিক সেভাবে তাকেও মেরে ফেলার হুমকি দেন এই ছাত্রলীগ নেতা। শুক্রবার সন্ধ্যায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা ২০২নং রুমে ডেকে নিয়ে তাকে বিভিন্ন নির্যাতন করে।
ভুক্তভোগী সামসুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাসা নারায়ণগঞ্জ জেলায়। অন্যদিকে অভিযুক্ত ভাস্কর সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গবেষণা ইন্সটিটিউটের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার হলের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর অনুসারী বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, ভুক্তভোগী মতিহার হলের তৃতীয় ব্লকের ১৫৯নং রুমে থাকেন। হলের কক্ষে পড়াশোনার পাশাপাশি মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ করেন তিনি। গত ১৫ আগস্ট ভুক্তভোগীকে ফোন দিয়ে ১২ হাজার টাকার চাঁদা দাবি করেন অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা। ভুক্তভোগী ৫ হাজার টাকা দিতে চাইলে তাকে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতার ২৫৯নং রুমে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ সময় ৫ হাজার টাকা ছাড়া অতিরিক্ত টাকা দিতে পারবে না বলায় ভুক্তভোগীকে গলায় ছুরি ধরে রড ও স্ট্যাম্প দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বেধড়ক পেটানো হয়। বিকাল ৩টা থেকে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত তাকে বিভিন্নভাবে তাকে শারীরিক নির্যাতন করা হয়।
সাংবাদিক ও পুলিশকে এসব কথা জানালে তাকে বুয়েটের আবরার ফাহাদের মতো তাকেও মেরে ফেলা হবে এবং শিবির বলে বেধড়ক পিটিয়ে পুলিশে দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়।
ভুক্তভোগী সামসুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আমার পরিবার খুব দরিদ্র। ফলে হলের শিক্ষার্থীদের মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ করে পরিবারের দেখাশোনা করি। হলে সার্ভিসিং কাজ করার জন্য ছাত্রলীগ নেতা চাঁদা দাবি করলে আমি ৫ হাজার টাকা দিতে চাই। ৫ হাজার টাকা হবে না বলে আমাকে তার রুমে ডেকে নিয়ে বেধড়ক মারধর করেন। আমি একপর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। এখন আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছি। প্রশাসনের কাছে আমার বিচার চাই বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা ভাস্কর সাহা মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমাকে ফাঁসানোর জন্য এমনটা করা হচ্ছে। কারো ইন্ধনে এমনটা করা হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।
শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, আমি এ বিষয়ে মাত্র অবগত হলাম। আমি খোঁজ নিচ্ছি, সত্যতা প্রমাণিত হলে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর বলেন, আমি ইতোমধ্যে অভিযোগ পেয়েছি। শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত দেওয়া এক ধরনের অপরাধ। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য তাকে মেডিকেলে পাঠিয়েছি। আমরা তদন্ত করে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী সর্বোচ্চ কঠোর ব্যবস্থা নেব।
রাবি প্রক্টর প্রফেসর ড. আসাবুল হকও একই কথা বলেন।