গণআন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন নিশ্চিত করার পরই নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে বিএনপি। সেই সঙ্গে, মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা বাস্তবায়নের প্রধান দায়িত্ব বিএনপির উল্লেখ করে, একাত্তরের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করারও দাবিও জানিয়েছেন দলটির নেতারা।
বিএনপির অন্যতম অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের আয়োজনে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শনিবার এক মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নিয়ে শর্তহীনভাবে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করার পাশাপাশি উপরের কথাগুলো জানান, দলটির সিনিয়র নেতারা। সেই সঙ্গে সরকারের সমালোচনাও করেন তারা।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘বিএনপি শান্তিপূর্ণ বিভাগীয় সমাবেশ কর্মসূচি দিয়েছিল। এই সরকারের পুলিশ বাহিনী, পেটোয়া বাহিনী সেখানে বাধা সৃষ্টি করেছে। সব বাধাকে উপেক্ষা করে প্রতিটি কর্মসূচিকে জনগণ সফল করেছে। এই সরকারকে যত শিগগিরই বিদায় করা যায়, এ দেশের এবং জনগণের তত মঙ্গল।
মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়া আর গণতন্ত্র একে অপরের সম্পূরক। গণতন্ত্রের অর্থই হচ্ছে খালেদা জিয়া। আজকে আমাদের নেত্রী কারাগারে, শুধু গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করার কারণে আজকে মিথ্যা-বানোয়াট মামলায় ফরমায়েশি রায় দিয়ে দেশনেত্রীকে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তেমনিভাবে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকেও একটি বানোয়াট মামলায় ফরমায়েশি রায়ে বিদেশে থাকতে বাধ্য করছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আজ যারা ক্ষমতায়, তারা স্বাধীনতার পর ক্ষমতায় এসে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত গণতন্ত্রকে হত্যা করে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে এদেশে সারাজীবনের জন্য রাজত্ব কায়েম করতে চেয়েছিল। কিন্তু তা ব্যর্থ হয়েছে। এই আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পর বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের নামে অর্থনীতি লুটপাট করে এদেশে দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি করেছিল।
তিনি আরও বলেন, ১/১১তে যারা সংবিধান বহির্ভূতভাবে জরুরি আইন করে সরকারে ছিলো, সেই সরকার এদেশ থেকে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার জন্য শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসিয়ে গিয়েছে। এরপর এই সরকার গায়ের জোরে প্রতিটি নির্বাচন করে ক্ষমতায় রয়েছে। ২০১৪ এর নির্বাচন এদেশের মানুষ বয়কট করেছিল নির্বাচন বয়কট হওয়ার পরও এই সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় থেকেছে। ২০১৮ সালে তারা দিনের ভোট রাতে ডাকাতি করেছে।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান এবং তার তার পরিবার আওয়ামী লীগের শত্রু। কারণ আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার ঘোষণা থেকে শুরু করে যে যে ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে, সেখানে বিএনপি সফল হয়েছে। এজন্য আজকে আওয়ামী লীগ বিএনপিকে, এ দেশের জনগণকে ভয় পায়।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, আওয়ামী লীগ জিয়া পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করার পাঁয়তারা করছে। এর মধ্যে অলিখিত এক নম্বর তালিকায় যে মন্ত্রণালয়টি আছে, সেটি হচ্ছে জিয়া পরিবার ও বিএনপি নেতাদের নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আংশিক সত্য কথা বলে জাতিকে বিভ্রান্ত করে। পানি যেমন কাটা যায় না, তেমনি মুক্তিযুদ্ধ ও বিএনপিকে আলাদা করা যায় না। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং শহীদ জিয়া পানির মতো সমান্তরাল। এর মাঝে যতই কাটার চেষ্টা করা হোক, তা কখনোই সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের মধ্যে এমন মন্ত্রীও আছেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় যাদের বয়স ছিলো তিন। আওয়ামী লীগের অর্থমন্ত্রী লোটাস কামাল মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। সেই আবেদন বাতিল হয়েছে, কারণ সে সময় তার বয়স ছিল ১১।
জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম, বিএনপি চেয়ারপার্সন উপদেষ্টা ও সংসদের সাবেক চিফ হুইপ জয়নুল আবেদীন ফারুক, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য ফজলুর রহমান, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর, শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়াসহ আরও অনেকে।