আওয়ামী লীগ দেশের স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না, এর প্রমাণ তারা একে একে দিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতাযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। নিজেদের স্বাধীন বলে গর্ববোধ করছে। তখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারত সরকারকে বলেন, আমাদের সাহায্য করবেন শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য। অর্থাৎ তারা এ কথা বলতে চায়, ভারত সরকারের আনুকূল্যে এই সরকার টিকে আছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা দাবি করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যতবারই ক্ষমতায় এসেছে, বর্গিদের ভূমিকা পালন করেছে, দেশের মানুষের সম্পদ লুট করে নিয়ে গেছে।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, সরকারের বিভিন্ন রকমের নিবর্তনমূলক সিদ্ধান্তের কারণে সাধারণ মানুষের প্রতিদিনকার জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। যাঁদের আয় অত্যন্ত সীমিত, তাঁদের পক্ষে জীবন ধারণই অত্যন্ত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, সবচেয়ে করুণ অবস্থার মধ্যে আছেন যাঁরা নিম্নবিত্ত মানুষ, যাঁরা নামতে পারেন না, প্রতিবাদ করতে পারেন না, তাঁদের অভাবের কথা মানুষকে জানাতেও পারেন না তাঁরা। অন্যদিকে আজকে কারা ভালো আছে? একটা লুটেরা এলিট শ্রেণি ভালো আছে। এই লুটেরা এলিট শ্রেণি কারা? এই শ্রেণি হচ্ছে আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদেরা, তাঁদের মন্ত্রী, তাঁদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। আমলা কিছু আছেন, যাঁরা প্রতিদিন দেখবেন বিভিন্ন প্রজেক্ট তৈরি করছেন কীভাবে তাঁদের আরও বিত্তসম্পদ তৈরি হবে, কানাডার বেগমপাড়ায় তাঁদের বাড়ি তৈরি হবে।
টক শো আলোচকদের একটি অংশের সমালোচনা করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু উচ্ছিষ্টভোগী শিক্ষক, কিছু বুদ্ধিজীবী এঁরা এবং তাঁরা যখন টক শোতে কথা বলেন তখন মনে হয় মোমেন সাহেব (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) বলেছেন, বেহেশতে আছি এটা অমূলক কোনো কথা নয়। তাঁরা প্রমাণ করতে চান, আসলেও মানুষ বেহেশতে আছে।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কঠোর সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এমন একটা আইন করেছে, যে আইনের মাধ্যমে কারও কোনো লেখার সাহস থাকবে না। সরকারকে সেন্সর করতে হয় না। প্রতিটি মিডিয়া হাউস বিষয়ে একজন করে দায়িত্বপ্রাপ্ত গোয়েন্দা আছে, যে গোয়েন্দা টেলিফোন করে বলে, নিউজটা এ রকম গেল কেন? টক শোতে কে আসবে, না আসবে সবকিছু তারা নির্ধারণ করে দেয়। এ দেশ কি আপনারা বলবেন স্বাধীন দেশ? এখানে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে এই অবৈধ সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। এটা কোনো দিন গণতান্ত্রিক দেশ হতে পারে না। আওয়ামী লীগকে এ জন্য কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।’
২০১২ সালে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই গুম নিয়ে কথা বললেও কেউ গুরুত্ব দেয়নি বলে অভিযোগ করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার এর আগে চার–পাঁচবার বাংলাদেশে আসার অনুমতি চাইলেও দেওয়া হয়নি। সামনে নির্বাচন আছে, তাই তারা দেশে আসার অনুমতি দিয়েছে। এবার দিয়েছে, প্রথমে ভেবেছে তাদের নিয়ন্ত্রণ করে একটা ভালো বক্তব্য তারা পাবে। মন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলিয়েছে। প্রতিটি প্রোগ্রাম তারা মনিটর করিয়েছে। কারণ, যারা গুম হয়েছে, তাদের পরিবারের সঙ্গে যাতে দেখা করতে না পারে। যারা গুম হয়েছে, তাদের পক্ষে কেউ যাতে কথা বলতে না পারে। তবে এবার পরিষ্কার করে তারা বিবৃতিতে বলে গেছে, বাংলাদেশে এটা একটা ভয়াবহ ঘটনা। মানুষকে গুম করা হচ্ছে। বিনা বিচারে হত্যা করা হচ্ছে, অন্যায় নির্যাতন করা হচ্ছে।
জাতিসংঘ যখন এসব কথা বলেছে, তখনই তাদের গায়ে যেন বিছুটি লেগেছে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, একজন মন্ত্রী তো বলেই ফেললেন, জাতিসংঘের কোনো এখতিয়ার নেই এসব করার।
বিএনপির ছয় শতাধিক নেতা–কর্মীকে গুম করা হয়েছে বলে দাবি করেন বিএনপির মহাসচিব। কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার আসার আগে ২০০৯ সালের আগে আপনারা কি কোনো গুমের কথা শুনেছেন? কখনোই শোনেননি। বিচারবহির্ভূত হত্যার কথা শুনেছেন? এখানে এখন তাই হচ্ছে। এইভাবে বিরোধী পক্ষকে, বিরোধী মতকে সম্পূর্ণভাবে দমন করার যে ফ্যাসিস্ট কায়দা, যে কর্তৃত্ববাদী কায়দা সেই কায়দায় এখন তারা এই দেশকে দখল করে নিয়ে পুরোপুরি ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এই পথগুলো অনুসরণ করছে।’
নেত্র নিউজের প্রতিবেদনে উঠে আসা ‘আয়নাঘর’ নিয়ে কথা বলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘সেখানে আমাদের নেতা-কর্মীদের ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। মাসের পর মাস সেখানে রাখা হয়। তারপর কাউকে কাউকে হত্যা করা হয়। কাউকে কাউকে বছরের পর বছর রেখে দেওয়া হয়। যাঁরা সেখান থেকে সৌভাগ্যক্রমে বেরিয়ে আসছেন, তাঁরা এখন স্টেটমেন্টগুলো দিচ্ছেন।’
ইউট্যাবের সভাপতি অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খানের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লুতফর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল আহসান, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডী, অধ্যাপক আবুল হাশেম, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাসুদুল হাসান (মুক্তা), অধ্যাপক মামুনুর রশীদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শের মাহমুদ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক (সৈকত), উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জাহাঙ্গীর সরকার, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মামুন উর রশীদ, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের রিয়াজুল ইসলাম (রিজু), ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের পারভেজ রেজা (কাকন), ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের কাদের গনি চৌধুরী, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের মাহবুব আলম প্রমুখ বক্তব্য দেন।