* রাতেই ওই পুলিশ সদস্য প্রত্যাহার * আসামি প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার চাচাতো ভাই * নেতাকে ফোনে রেখে বিচারপ্রার্থীকে পেটানো হয়েছে বলে অভিযোগ
মানিকগঞ্জের শিবালয়ে পাঁচ বছরের এক কন্যাশিশুকে ধর্ষণচেষ্টার বিচার চাইতে থানায় যান তার বাবা। সেখানে বিচারপ্রার্থীকে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে এক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। গতকাল শনিবার রাতে শিবালয় থানায় এ ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত এএসআই আরিফ হোসেনকে রাতেই থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়।
প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিবালয় সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূরজাহান লাবনী।
ভুক্তভোগী ওই শিশুর বাবা জানান, স্ত্রীসহ তিনি ঢাকায় থাকেন। তার পাঁচ বছরের কন্যা থাকে দাদির কাছে। গত মাসের ২০ জুলাই উপজেলার প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা মো. মান্নান খানের চাচাতো ভাই রজ্জব খান শিশুটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। ওই সময় বিষয়টি হাতে নাতে ধরে ফেলেন শিশুটির দাদি। পরে স্থানীয় গ্রাম্য মাতবরদের জানানো হলেও আসামিরা প্রভাবশালী হওয়ায় তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছিলেন না। এ ঘটনায় উল্টো তাকেই নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হতো। এরপর গত ১৪ আগস্ট শিবালয় থানায় এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ করেন তিনি। কিন্তু সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও থানা থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ তার।
পরে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় অভিযোগের বিষয়ে খোঁজখবর নিতে নিজের মা (শিশুর দাদি) ও মেয়েকে নিয়ে থানায় যান বাবা। এসময় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কক্ষে ছিলেন না। থানার আসার কারণ জানতে চান এএসআই আরিফ হোসেন। তাকে পুরো ঘটনা জানান শিশুটির বাবা। কথাবার্তার একপর্যায়ে এএসআই আরিফ তার শার্টের কলার ধরে একটি কক্ষে নিয়ে যান।
বিচারপ্রার্থী ওই বাবার অভিযোগ, কক্ষে নেয়ার পর আরিফ অভিযুক্তের ভাই আওয়ামী লীগ নেতা মান্নানকে ফোনে রেখে তাকে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি লাথি মারাসহ লাঠি দিয়ে মারধর করেন। একপর্যায়ে তিনি মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন। এসময় বাইরে তার মা ও শিশু কান্নাকাটি করলেও আরিফের হাত থেকে রক্ষায় থানার কেউ এগিয়ে আসেননি। পরে আরিফ তাকে মেঝে থেকে তুলে বলেন, যা চলে যা, দৌড়ে চলে যাবি থানা থেকে।
শিশুটির দাদি জানান, ছেলের সাথে নাতনীকে কোলে নিয়ে তিনিও থানায় গিয়েছিলেন। এএসআই আরিফ যখন তার ছেলেকে টেনে রুমে নিয়ে মারধর করতে থাকেন তখন কয়েকজন পুলিশ সদস্যের হাত পা ধরে তিনি কান্নাকাটি করেছেন। কিন্তু কেউ তার ছেলেকে উদ্ধার করেননি। এসময় তার নাতনীও কান্নাকাটি করছিল। অনেক ভয় পেয়েছে সে। পরে ছেলেকে উদ্ধার করে শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
তার পা, হাত ও মাথার বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
একজন বিচারপ্রার্থীর সাথে পুলিশ সদস্যের এমন আচরণের বিষয়টি জানাতে রাতেই মা ও শিশু কন্যাকে সঙ্গে নিয়ে মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়ে যান শিশুটির বাবা। সেখান থেকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে যান শিবালয় সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে। এসময় তার মা ও এলাকার একজনের কাঁধে ভর করে শিশুটির বাবাকে অফিসে ঢুকতে দেখা যায়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূরজাহান লাবনী তাদের ঘটনা শুনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
শিবালয় সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূরজাহান লাবনী জানান, ঘটনা জানার পর অভিযুক্ত এএসআই আরিফ হোসেনকে রাতেই থানা থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার জন্য সুপারিশ করা হবে। এছাড়া ধর্ষণচেষ্টার ঘটনায় অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।